ফেনীতে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) চায়ের কাপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ব্যবহার বেড়েছে প্লাস্টিক প্লেট, চামুচ, বাক্সসহ সবধরণের ওয়ান টাইম পণ্যের। চা দোকানিরা বলছেন, এর ব্যবহার বেড়েছে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে।

প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রচলন রয়েছে ফুড গ্রেড প্লাস্টিক। যদিও ক্রেতা বিক্রেতা এ বিষয়ে অবগত নন। বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন রাসেল বলছেন, করোনা প্রাদুর্ভাবে ওয়ানটাইম কাপ ব্যবহার শুরু করেছি। স্টেশন রোডে চা বিক্রেতা আলম বলছেন, রঙিন কাপে চা বেচে বাড়তি চার টাকা পাওয়া যায়। অর্থাৎ পূর্বের ছয় টাকার চা এখন দশ টাকা।

ফেনী শহরের বড় বাজারে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, খাবারের বাক্সের ব্যবসা করছেন এমন দোকানের সংখ্যা ২১টি। তাদের তথ্যমতে করোনার পূর্বে কাগজ ও প্লাস্টিক কাপ প্রতিমাসে গড়ে দুই লাখ পিস বিক্রি হত। এখন তা চল্লিখ লাখ পিসের বাজার।

তারা জানান, প্লাস্টিক পণ্য ঢাকা হতে আসে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো কারখানা নেই। যে কেউ এসব কারখানা গড়ছে এবং যে কেউ নিজের ইচ্ছেমত ব্র্যান্ডিং করছে।

বড় বাজারে যমুনা পেইন্টিং এন্ড প্যাকেজিং এর পরিচালক রাকিন জানান, পূর্বের স্বচ্ছ প্লাস্টিক কাপের বাজার আরও বিস্তৃত হলেও সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে কাগজের কাপ নামে পরিচিত বর্ণিল কাপগুলো। যা পূর্বে শুধু কফি বিক্রয়ে ব্যবহৃত হত। মাসে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে দুই ধরণের কাপ মিলে দেড় লক্ষাধিক বিক্রয় হয় বলে তিনি জানান। একই সাথে ওয়ানটাইম বিরিয়ানি বাক্সসহ অন্য পণ্যেরও বাজার বড় হয়েছে বলে তিনি জানান।

ফরিদ রেক্সিনের মালিক মোঃ সেলিম জানান, মাসে কাগজের কাপ বিক্রি হয় পাঁচ লাখের বেশি। মূল ক্রেতা হল চা বিক্রেতা। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের অন্যান্য পণ্যের চাহিদা রয়েছে। সব ধরণের পণ্যই ঢাকা হতে আসে।

দেশীয় স্বনামধন্য ব্র্যান্ড আরএফএল বাজারজাত করছে ওয়ানটাইম কাপ। ফেনী বাজারে এর ডিস্ট্রিবিউটর ফেনী এ্যালুমিনিয়াম স্টোরের মালিক পক্ষ সোহেল জানান, মাসে দুই লাখ পিস সরবরাহ হয়ে থাকে।

বাজারে কাগজের তৈরি নামে প্রচলিত কাপগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর তা বিক্রেতা এবং ভোক্তা কেউ জানেন না। কাগজের কথা বলা হলেও এগুলো পাতলা প্লাস্টিকে লেমিনেটেড। কাপের গায়ে লেখা নেই ব্যবহারবিধি ও তৈরির উপকরণ। সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারছে না ভালো এবং মন্দ দিক।

এ বিষয়ে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা বলেন, পানির বোতল সবদেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে। একইভাবে ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। যদি প্রমাণিত হয় এটি স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তবে ভোক্তা অধিকার আইনে দন্ডনীয় হবে।

পরিবেশবাদী ও দৈনিক পূর্বকোনের সহকারি সম্পাদক আফসার মাহফুজ বলেন, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষতিকর দিক নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে।

রায়হান মাসুম নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা জানান, ওয়ান টাইম কাপের চাহিদা এমন হয়েছে ইচ্ছে করলেও ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না। ব্যবহারের পর শহরের রাস্তাঘাট, ফুটপাথ ও ড্রেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা কাপগুলো পরিবেশ দূষণের একটি কারণ তৈরি করতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমি কৌশল বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মো. দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, এর ক্ষতির পরিমাণ ও প্রভাব নির্ভর করছে কি কি উপাদানে তা তৈরি হচ্ছে। গরম চায়ের সংস্পর্শে এসে প্লাস্টিক অথবা কথিত কাগজের কাপ মানবদেহে কি কি ক্ষতি করতে পারে তা জানতে হলে তৈরির উপকরণ জানতে হবে।

উল্লেখ্য, পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (ওয়ান টাইম) পণ্যের ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এক বছর সময় বেঁধে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত বছরের ১১ জানুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত এক হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন।

গতবছর ২৩ জুন দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় গবেষকদের মতে, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা বিসফেনল-এ নামের টক্সিক এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মেশে। এটি নিয়মিত শরীরে ঢুকলে নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘিœত হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু কমে যায়।

এছাড়া হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

গবেষণায় থেকে আরো জানা যায়, প্লাস্টিকের কাপ তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলি বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে ক্লান্তি, হরমোনের ভারসাম্যতা হারানো, মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যাওয়া-সহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।