দাগনভূঞায় কৃষি উন্নয়নে কৃষকদের সেবায় অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করছে কৃষি বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের মধ্যে তাৎক্ষণিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাঠে গিয়ে কৃষি সংক্রান্ত তথ্য খুব সহজেই কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতি অনলাইনে বিভিন্ন কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খামারি অ্যাপ, বালাইনাশক সহায়িকা, কৃষকের অ্যাপ (শুধু ধান বিক্রয়ের জন্য) ও আমার পুষ্টিসহ বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে সরেজমিনে কৃষকদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার পৌর শহরের চাঁনপুর এলাকায় মাঠে দেখা গেছে, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বেশ কয়েকজন কৃষককে অনলাইনে মোবাইলের মাধ্যমে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। সেখানে তিনি ধানের জমিতে যাতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ না হয় এবং হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং তার প্রতিকার কি সে সম্পর্কে কৃষকদের আগাম সতর্কতা দিচ্ছেন। এছাড়া কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ফসল ব্যবস্থাপনা, রোগ, পোকা-মাকড় সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে বসেই ডিজিটাল অ্যাপসের মাধ্যমে নিজের ধানের জমিতে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কি না তা মিলিয়ে দেখছেন পৌর শহরের চাঁনপুর এলাকার কৃষক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, মোবাইলফোনে কিভাবে ধানের চাষ, পোকা লেগেছে কি না, রোগ হয়েছে কি না—তা নিজে দেখলাম। মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের শেখালেন ধানে কোন সময় কি দিতে হবে এবং ব্লাস্ট রোগ হওয়ার আগে আমাদের কি কি করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম দৈনিক ফেনীকে বলেন, খামারি অ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মাটির গুণগত মান, মাটিতে কোন ধান বপন করলে ফলন ভালো হবে এবং কী পরিমাণ সার দিতে হবে-সেসব সম্পর্কে জানা যাবে। এ অ্যাপের মাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারবে কৃষক। খামারিসহ অন্যন্যা মোবাইল অ্যাপ এখন কৃষকের বন্ধু। এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ কমবে ও ফসলের উৎপাদন বাড়বে। কারণ এ অ্যাপের মাধ্যমে মাটির গুণগত মান, মাটিতে কোন ধান বপন করলে ফলন ভালো হবে এবং কী পরিমাণ সার দিতে হবে- সেসব সম্পর্কে জানা যাবে। এ অ্যাপের মাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারবে কৃষক।

উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া দৈনিক ফেনীকে বলেন, গ্রামের প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে শহরের মানুষ, কেউ বাদ যাচ্ছে না প্রযুক্তির উন্নয়নের সেবা থেকে। প্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুফল ভোগ করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা। ‘অনলাইন কৃষি সেবা’র মাধ্যমে ফসলের মাঠে বসেই পাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সমাধান। কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি বিভাগ। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফসল চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে আমরা চেষ্টা করি তাৎক্ষণিক সেটার সমাধান করার। নিরাপদ উপায়ে এবং আধুনিক চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি বিভাগ কৃষকদের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা অনলাইনে পৌঁছে দিতে জোর দিয়েছে। কৃষি কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছে দিচ্ছি।

দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কামরুজ্জামান দৈনিক ফেনীকে বলেন, উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এবং উপজেলার সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে সর্বাক্ষণিক কৃষি সেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বতর্মানে অনেক কৃষক স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। আমরা তাদের কাছে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপস পৌঁছে দিচ্ছি সেই সঙ্গে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও কাজ করে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং মাঠে গিয়ে তাদের সেবা দেওয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলায় কর্মরত প্রতিটি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সবাই মাঠে গিয়ে হাতে কলমেও কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।