দাগনভূঞায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিশেষ উদ্যোগে সমিতির মাধ্যমে পারিবারিকভাবে হাঁস-মুরগি লালন পালন করে স্বনির্ভর হয়েছে উপজেলার ৮০ জন নারী। তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে প্রশিক্ষণ ও উপকরণের ব্যবস্থা করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এসব কাজে লাগিয়ে নারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, করছেন সঞ্চয়। তবে হাঁস-মুরগির বাচ্চার মৃত্যু কমলে তারাও আরও লাভবান হবেন বলছেন উপকারভোগী নারীরা। এজন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার আশ^াস দিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারীদের নিয়ে উপজেলা আজিজ ফাজিলপুর ও চুন্দারপুর পারিবারিক হাঁস মুরগি উৎপাদনকারী দল নামে দুটি পৃৃথক সমিতি গঠন করা হয়েছে। দুই সমিতিতে ৪০ জন করে মোট ৮০ জন নারীকে এতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সমাজের অসহায় ও দরিদ্র নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তুলতে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুজন কান্তি শর্মা জানান, প্রাণিখাতে স্বয়সম্পূর্ণ ও নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে উক্ত দুটি সমিতির মাধ্যমে হাঁস-মুরগি লালন পালন করা হচ্ছে। এটি তদারকি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এজন্য গত অর্থবছরে পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য প্রতিজন নারীকে ২০ হাজার টাকা সমমূল্যের ঘর করে দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, গত সোমবার বিকালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরে দুই গ্রুপের ৮০ জনকে খাবারপাত্র ও পানিরপাত্র বিতরণ করা হয়েছে। এতে হাঁস-বিক্রি করে নারীরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, পাশাপাশি তারা সঞ্চয়ও করছে। এ প্রকল্পে অনেক বিধবা নারী তার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় হাঁস মুরগি পালন করে সাবলম্বী হয়েছেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে দৈনিক ফেনী প্রতিবেদক। তাদের একজন হচ্ছেন আজিজ ফাজিলপুর পারিবারিক হাঁস-মুরগি উৎপাদনকারী দলের জোছনা আরা বেগম। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে হাঁস মুরগি পালন করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন দরিদ্র এ নারী। তিনি জানান, বর্তমানে ৪০টি হাঁস-মুরগি লালনপালন করছেন। ইতোমধ্যে ৫ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি ও একটি ২০ টাকা করে ১ হাজার ৫০০ টাকার হাঁসের ডিম বিক্রি করেছেন। এতে তার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা মিটছে।

একই ভাবে সাবলম্বী হয়েছেন একই সমিতির রামনগর গ্রামের মোঃ ইমনের স্ত্রী ফাহমিদা ফেরদাউস। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে হাঁস-মুরগি লালনপালন শুরু করেন তিনি। বন্যায় ক্ষতি হলেও নতুন করে হাঁস-মুরগি লালন পালন শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে তার ৩০টি হাঁস-মুরগি রয়েছে। এ থেকে পরিবারে অর্থের যোগান হচ্ছে।

একই সমিতির আরেক উপকারভোগী ইকবাল হোসেনের স্ত্রী কামরুন নাহার বলেন, হাঁস-মুরগি লালন পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিটি ২০টাকা করে ২ হাজার টাকার হাঁসের ডিম বিক্রি করেছি। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে ঘুরে দাঁড়ানো জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

একই সমিতির কাজল নামে আরেক সদস্য জানান, বর্তমানে তিনি ৫০টি হাঁস মুরগি পালন করছেন। দুই হাজার টাকা করে দুটি মুরগি তিনি ৪ হাজার টাকা এবং ৪টি হাঁস বিক্রি করে পেয়েছেন ২ হাজার ৮০০ টাকা। হাঁস-মুরগি পালনের প্রাণিসম্পদের প্রশিক্ষণ তার বেশ কাজে লেগেছে।

চুন্দারপুর পারিবারিক হাঁস মুরগি উৎপাদনকারী দলের সদস্য আবদুল হান্নানের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার জানান, বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হলেও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় হাঁস-মুরগি পালন করে দুর্দশা কাটিয়ে সাবলম্বী হয়ে উঠছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন।

একই সমিতির সদস্য বিধবা আরজু আক্তার বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। এ প্রকল্পে যুক্ত হাঁস-মুরগি পালন করে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা আয় করেছেন।

একই সমিতির আরেক সদস্য প্রবাসী শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী শামুসন নাহার জানান, হাঁস-মুরগি পালন করে তিনি এখন আর্থিকভাবে সাবলম্বী। এখন প্রবাসীর স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করতে হয় না। দুটি রাজহাঁস বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকায়। এছাড়ার আরও ৫ হাজার টাকার হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। এতে করে আর্থিকভাবে তিনি যেমন সাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি পরিবারে খাবারের চাহিদাও মিটছে। হাঁস-মুরগির বাচ্চা মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে ভ্যাকসিনের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সহযোগিতা করলে আরও উপকৃত হতাম।