গেল বছরের ২৯ মে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ে আবদুল গফুর ভূঞার নামে এক ব্যক্তির বাসায় ৪০-৫০ জন যুবক হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা বাসার নিচতলায় দরজার বাইরে থেকে আটকিয়ে দ্বিতীয় তলায় গফুর ভূঞার বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধূ ও দেড় বছর বয়সী নাতনিকে মারধর করে। পরে ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। হামলাকারীরা একপর্যায়ে আবদুল গফুর ভূঞাকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মারে। ওই সময় তার শরীরের অস্ত্রোপাচারের স্থানে আঘাত লাগে। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে এ ঘটনায় নানা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৈরি হয় ধোঁয়াশা।

এ ঘটনায় গত ৪ জুন আদালতের আদেশ পেয়ে দাগনভূঞা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। ২ জুন গৃহকর্তার বড় ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু বাদী হয়ে আদালতে মামলা করলে দাগনভূঞার আমলী আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমান এ আদেশ দেন। এ মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- নির্মল সাহা (৫০), চয়ন সাহা (৩৫), দহন সাহা (৩০), আইয়ুব আলী (৪৫), ছেরাজুল হক প্রকাশ হকসাব (৫০) ও ইকবাল।

পরে ১২ জুন দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে আবদুল গফুর ভূঞা হত্যা মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কাতার প্রবাসী আবদুল গফুর ভূঞা প্রায় ১৫ বছর আগে দাগনভূঞা পৌর এলাকার হাসপাতাল রোডের পলাশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে ছয় শতক জায়গা ক্রয় করেন। ওই জায়গায় ২০১৩ সালে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেন। ২০২৩ সালে কাতার থেকে দেশে ফেরার পর পলাশ চন্দ্র সাহার ভাগ্নে সয়েল সাহা নিজেকে ওই জায়গার মালিক বলে দাবি করেন। তার কাছ থেকে জায়গাটির আমমোক্তারনামা নেন দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল নামে এক ব্যক্তি।

মামলার বাদী রিয়াদ হোসেন রাজু ইতোমধ্যে বলেন, বাবা দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফেরার পর ক্যান্সার আক্রান্ত হন। হামলার ঘটনার একদিন আগেও ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে ভবন ও জায়গা দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন বাড়ি ছেড়ে দিতে বারবার হুমকি দেন। তার নির্দেশে এ হামলা হয়েছিল। হামলাকারীরা বাবাকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মারে। এ সময় তার শরীরের অস্ত্রোপচারের স্থানে আঘাত লাগে। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাগনভূঞা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী দৈনিক ফেনীকে বলেন, এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা হয়েছিল। আদালতের আদেশ পেয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এ মামলায় চয়ন সাহা নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শিগগিরই মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশের এ কর্মকর্তা অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।