সোনাগাজীতে আসামি ধরতে গিয়ে উল্টো পুলিশের ওপর হামলা, শটগান ও ওয়াকিটকি খোঁয়ানোর ঘটনাকে অযোগ্যতা বিবেচনায় ৬ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (৮ অক্টোবর) তাদের ফেনী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

ফেনী পুলিশ লাইনে সংযুক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই পুলিশ সদস্যরা আসামি ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হন। উল্টো শটগান ও ওয়াকিটকি ফেলে চলে আসেন। এটি ব্যর্থতা, তাদের এ দায় নিতে হবে।

সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই সাইদুর রহমান ও মোফাজ্জল হোসেন, কনস্টেবল মাহবুব আলম, আইনুল করিম, কাঞ্চন ও হৃদয়। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় দুই নারীসহ তিনজনকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন জাহেদুল ইসলাম, তার ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নিশু।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে সোনাগাজী থানার সহকারী উপপরিদর্শক সাইদুর রহমান ও মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের দুইটি দল গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি আহাম্মদপুর গ্রামের আবুল হাশেমের দুই ছেলে জাহেদুল ইসলাম রিপন ও রফিকুল ইসলাম আরিফকে গ্রেপ্তারে তাদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা পুলিশের কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি ও একটি শটগান কেড়ে নেয়।

সরকারি কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে গ্রেপ্তার আসামিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ষড়যন্ত্র করে তাদের ফাঁসিয়েছে।

পুলিশকে হামলায় অভিযুক্ত রিপন এর মেজো বোন রোকসানা আক্তারের (৩৬) দাবি করেন- রিপন ডাকাত নন, নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ না দেওয়ার কারণে রিপনের বিরুদ্ধে আমরা সোনাগাজী থানায় অভিযোগ করতে চাইলে তৎকালীন ওসি বায়েজিদ আকন বলেন দু’টি ডাকাতি মামলায় চালান দিলে ঠিক হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী তাকে চালান করা হয়। এক মাসের বেশি কারাগারে থাকার পর রিপন জামিনে বের হলে এবার তাকে পুলিশ ওয়ারেন্ট আছে বলে বাড়িতে হামলা চালায়। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এখন আর কোনো পারিবারিক অভিযোগও নেই।

তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, পৃথক ঘরে আমার দুই ভাই, বৃদ্ধ মা, বোন, ভাবি থাকেন। তারা ৬ জন কী করে অস্ত্রধারী পুলিশের ওপর হামলা করবে?

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, গ্রেপ্তার রিপনদের পরিবার বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিভিন্ন মহল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের কাজে ব্যবহার করে থাকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি জাহেদুল ইসলাম রিপন ও রফিকুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, মারামারি, চাঁদাবাজিসহ অস্ত্র আইনে মোট ১২টি মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, সার্কেল কর্মকর্তা ও আমিসহ ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদের বাড়িতে ছিলাম। আমরা আসামি ধরার পর ফেনী থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এসেছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সোনাগাজী মডেল থানার ৬ জন পুলিশ সদস্য সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা কতটা আহত ছিলেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গুরুতর কিছু ছিল না; হাতাহাতির হয়েছে এমনটা। এজন্য তারা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই চলে গেছেন।