শিক্ষার মান, পরিবেশ এবং নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে সোনাগাজী ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বক্তারমুন্সী শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ নিয়ে বিতর্ক বহু পুরানো। এই কলেজে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার কলেজের এডহক কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে নাটকীয়তা। সমবায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. মো: নিজাম উদ্দিনকে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি ঘোষণা, বাতিল ও পুনর্বহাল নিয়ে গত আড়াই মাসে তিনবার পরিপত্র জারি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এডহক কমিটি নিয়ে ঘোষণা-পরিবর্তন-পূনর্বহাল নিয়ে ‘পরিবর্তনের জালে’ বিব্রত কলেজটির শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে কলেজটি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিযোগিতা চলছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এডহক কমিটির সভাপতি নিয়ে চলমান বিতর্কের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা চাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ক্যাম্পাস এবং সভাপতি পদে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি কলেজের সভাপতি পদকে বিতর্কের উর্ধে রাখা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত তিনটি পত্রে আড়াই মাসে দুইজনকে এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে অফিস আদেশ দেন। গত ৬ অক্টোবর ঘোষিত এক আদেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে সভাপতি করা হয়। এর দুই মাস না যেতেই গত ৮ ডিসেম্বর এই ড. নিজাম উদ্দিনের স্থলে হোসাফ গ্রুপের পরিচালক মাবরুর হোসেনকে এডহক কমিটির সভাপতি করা হয়। মাবরুর হোসেন ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের ভাতিজা ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনের বড় সন্তান। এ ঘোষণার ৯দিন পর গতকাল মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে ফের সভাপতি করে চিঠি প্রেরণ করেছে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের কমিটিতে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। এছাড়া দাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও হিতৈষী সদস্য পদে একজনকে মনোনয়ন দেবেন সভাপতি এবং শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি ও অধ্যক্ষ সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও এই কমিটির মেয়াদ ছয় মাস। এই সময়ের মধ্যে কমিটি নিয়মিত পরিচালনা পর্ষদ গঠন করবেন।
এ ব্যাপারে ড. মো: নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর তিনটি সভা করেছি। কলেজের ব্যাংক হিসাব পরিবর্তন করে কলেজের শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি। মাঝে দুই সপ্তাহ অসুস্থ থাকায় এই ফাঁকে রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে আমাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন করানো হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করে, ইতোপূর্বে ড. মো: নিজাম উদ্দিন সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ভবিষ্যতে আবারও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন এমন ভেবে তাকে এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে একটি চক্র।
উল্লেখ, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আত্মগোপনে চলে যায়। সেসময় বক্তারমুন্সি শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সভাপতির পদে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ মাসুদ চৌধুরীর ছোট ভাই সাইফ উদ্দিন চৌধুরী। ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের একাধিক মামলায় তিনি এজহারনামীয় আসামী। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর তিনি আত্মগোপন করেন।