সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিদাস পাহালিয়া নদীর (সিলোনিয়া নদী) তীরবর্তী এলাকা নদীভাঙনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এতে ভিটেমারি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা প্রবল হয়েছে স্থানীয়দের মনে। ইতোমধ্যে ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বেশ কয়েক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে এসেছেন। স্থানীয় আরও ৩ শতাধিক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, নবাবপুরের ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড রয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী অংশে। নদীর এ তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর, উত্তর রঘুনাথপুর, মজুপুর মুখের টেক এলাকা। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ইউনিয়নের এসব এলাকা ৬ফুট থেকে ৮ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পরে ২৮ আগস্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করলে নদীর তীরে বড় বড় ফাটল দেখা দিতে থাকে। এরপর পানির স্রোতের কারণে প্রতিদিন তীরের মাটি ভেঙে বিলীন হতে থাকে নদীগর্ভে।

ভাঙন কবলতি এলাকাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মজুপুরের শুক্কর আহম্মদ, শাহাদাত, মফিজের ভিটেমাটিসহ ৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং শাহাবুদ্দিন, অটোরিকশা চালাক হোসেন, জসিমের ঘর-বাড়িসহ ৩০টি বেশি বাড়ির আঙিনা ইতোমধ্যে ভেঙ্গে নদীতে চলে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়াও রঘুনাথপুরে আমিরাবাদের বেঁড়িবাঁধ ইতোমধ্যে রাস্তাসহ ভেঙ্গে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ নদীর আগ্রাসী ভাঙনে সব হারানোর শঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠেছে। কালিদাস পাহালিয়া নদীর উপর নির্মিত নবাবপুর ব্রীজটি নবাবপুর থেকে কসকা যাওয়ার একমাত্র আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক। ইতোমধ্যে ব্রীজটির চারপাশ ভেঙে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব সুলতানপুরে সংযোগ সড়কটিও ইতোমধ্যে নদীর স্রোতের কারণে ১২ ফুট ভেঙে গেছে এবং স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বসত ঘরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড়ের ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে গুচ্ছ গ্রামের পরিবার রয়েছে ৭৭টি। সুলতানপুরের সংযোগ সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলেও ভাঙন স্থান দিয়েই পায়ে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে মানুষ।

নদীর পাড়ের বাসিন্দা জাকির আহম্মদ বলেন, নদী ভাঙনের যে ভয়াবহতা দেখছি, মনে হচ্ছে আমার বাড়িটিও ভেঙে যাবে। আমার দুই সন্তানের জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করে দুটি দালান নির্মাণ করেছি বেশ কয়েকবছর আগে। এগুলো এখন ইচ্ছে করলেও সরাতে পারবো না। শুধু আমরা নয়, পূর্ব সুলতানপুরের নদীর পাড়ের আদর্শ গ্রামে (গুচ্ছ গ্রাম) এরশাদের আমল থেকে ৭৭টি অসহায় পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। সেই পরিবারগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।

সুলতানপুরের আব্দুল মান্নান বলেন, নদী আমাদের থেকে কিছুটা দূরে ছিলো। এখন কূল ভেঙে বাড়ির আঙিনায় চলে এসেছে। প্রবাসে থেকে আমি এই বাড়িতে ৭লক্ষ টাকা খরচ করে বসতঘর নির্মাণ করেছিলাম। এই বাড়িটি ছাড়া বাহিরে কোন জায়গা-জমি না থাকায় এই ভাঙ্গন পরিস্থিতিতে আমি বিপদের মধ্যে আছি।

নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির জানান, আমার ইউনিয়নে তিনটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর কূলের ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের বাড়িঘর-আঙিনা ভেঙে গেছে তাদের অনেক পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে এবং নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, বন্যার পানির চাপ মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলিনের পর ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর স্লুইজ গেইট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনীপাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপুর, আউরারখিল, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটাখিলা, কালিমন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে আনেকে ঘর-বাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।