মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে তৈরি উদ্ভাবনী ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ‘মন তরঙ্গ’ জাতীয় পর্যায়ের সাফল্যের পর এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় প্রযুক্তিনির্ভর এই প্ল্যাটফর্মে রয়েছে মুড-ট্র‍্যাকিং, গাইডেড রিসোর্স, এআই চালিত কথোপকথন সুবিধা-যা মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য, নিরাপদ ও কলঙ্কমুক্ত পরিবেশে উপস্থাপন করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুব সহজ ও নিরাপদে পরিচয় গোপন রেখে মানসিক সহায়তা নিতে পারবে মানুষ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইয়াং সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ইনোভেটরস সোসাইটি আয়োজিত ইনোভেশন স্পার্ক প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করে ‘মন তরঙ্গ’। এই অর্জনের ধারাবাহিকতায় থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পর্বে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে এ দল।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণে তেজগাঁওয়ের সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতা। যা ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ইভেন্টটি ছিল আন্তর্জাতিক আয়োজন ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ এসটিইএম কনভেনশন অ্যান্ড ইনোভেশনের একটি বিশেষ সংযুক্ত পর্ব।

এ প্রকল্পটির নেতৃত্বে রয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের রিদম মুনশি। যিনি প্রকল্পের মূল নেতৃত্ব ও কৌশলগত নির্দেশনায় ভূমিকা রেখেছেন। অন্যজন ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হোসাইন রতুল। যিনি ব্র‍্যান্ডিং, মিডিয়া স্ট্র‍্যাটেজি ও সৃজনশীলতায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়া প্রকল্পের সদস্য হিসেবে রয়েছেন তৌহিদ হাসান, সানজিদা আশেকিন স্নেহা, শামিহা মালিক, খোইরম অনিক সিংহ, মিনহাজুল আবেদীন ও অর্ণব দত্ত।

উদ্যোক্তারা জানান, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপন করে ‘মন তরঙ্গ’ বিচারকদের নজরে বিশেষভাবে স্থান করে নেয়। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হওয়ার এই অর্জন শুধু একটি প্রকল্পের সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের তরুণ উদ্ভাবকদের সক্ষমতা, ভবিষ্যৎ ভাবনা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। এই সাফল্য দীর্ঘ গবেষণা, প্রচেষ্টা, সৃজনশীলতা ও সমাজকল্যাণমূলক চিন্তার সমন্বয়ে তৈরি। বৈশ্বিক মঞ্চে অংশগ্রহণের এই সুযোগ তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উদ্ভাবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

উদ্যোক্তা রিদম মুনশি বলেন, আমাদের দল ছোট, কিন্তু স্বপ্ন বড়। আমরা বিশ্বাস করি, প্রযুক্তি শুধু সুবিধা নয়, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি জীবনও বদলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশগ্রহণের সুযোগ আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মন তরঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের নাম বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য উদ্ভাবনের অগ্রভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করব।

প্রকল্পের বিষয়ে মেহেদী হোসাইন রাতুল বলেন, মন তরঙ্গ কোনো সাধারণ প্রজেক্ট নয়। এটি আমাদের প্রজন্মের মানসিক সুস্থতা নিয়ে যে সংকট, সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আত্মহত্যা আমাকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল। সেই ঘটনার পর আমি বুঝেছি মানসিক যন্ত্রণার মুহূর্তে যদি কেউ একটু কথার সঙ্গ, একটু আশ্রয় পেত, হয় তো অনেক কিছু বদলে যেত। সেই শূন্যতা থেকেই আমাকে এই কাজের পথে এগিয়ে দিয়েছে ‘মন তরঙ্গ’। আমরা চাই, কেউ যেন একা অনুভব না করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে দ্বিধা, লজ্জা ও নীরবতা রয়েছে আমরা সেই দেয়াল ভাঙতে চাই। সবাই যেন খুব সহজে, নিরাপদে ও পরিচয় গোপন রেখে সহায়তা নিতে পারে, এটিই ছিল আমাদের মূল ভিশন।