ভক্তদের চারদিনের আনন্দ-উল্লাস মাতিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন দেবী দুর্গা। আজ সোমবার (২৬ অক্টোবর) ফেনী শহরতলীর কালিপালে দশমী ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এ বছর দেবী মর্ত্যে এসেছিলেন পালকিতে চড়ে, আর কৈলাসে ফিরে গেলে হাতিতে চড়ে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিধি নিষেধ মেনে অনেকটা অনাড়ম্বরহীনভাবে উদযাপিত হয়েছে দূর্গাপূজা। তবু দেবীর আগমন ও প্রত্যাগমন ঘিরে ভক্তদের উৎসাহ আর আনন্দের কমতি ছিলনা। তবে বিদায়ের দিন ভক্তদের মনে ছিল বিষাদের সুর আর চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত।
আজ বিজয়া দশমীর দিন সকাল হতে মন্ডপে মন্ডপে দেবীর মুখে পান পাতা আর সিঁদুর ছুঁইয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে শুরু হয় বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর দেড়টা হতে ঢাক-ঢোলের বাদ্য বাজিয়ে কালিপালের দশমি ঘাটে পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনী জেলার আয়োজনে বিসর্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুরে হতে দেবীকে বিদায় জানাতে দিতে দলে দলে জড়ো হন নারী, পুরুষ শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারীরা। প্রতিমা ঘাটে নেবার পর ভক্তরা ধুপ-ধুনো দিয়ে আরতি করেন। এরপর পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শুরু হয় বিসর্জনের পালা। নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত ছিল র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বাস করে। তিনি বলেন, ফেনীতে এবার শান্তিপূর্ণভাবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পুজা উদযাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, এবার ফেনী জেলার ১৩৮টি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এবার সরকারি বিধিনিষেধ মেনে করোনা ভাইরাসের কারণে পূজার আনন্দ করিনি। তিনি বলেন, মা দূর্গা করোনা নামক এই ভাইরাস পৃথিবী থেকে নিয়ে যায়, সে প্রার্থনা ছিল আমাদের সকলের। এসময় সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
ফেনীর গুরুচক্র মন্দিরের পুরোহিত সুবোধ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, এবার মা দোলনা করে এসেছলিনে। কৈলাসে ফিরে গেছেন গজে করে। দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলের জন্য আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে করোনা হতে মুক্ত হয় এবং আসছে বছর সব স্বাভাবিক করে দেয়।
তিনি বলেন, ষষ্ঠী, সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহা নবমী শেষে আজকে বিজয়া দশমীর দিনে সকালে মায়ের বিদায় লগ্নের আগে পুজা করেছি। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে উলু দিয়ে, পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে আমরা মাকে বিদায় জানিয়েছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনী জেলা শাখার সভাপতি রাজিব খগেশ দত্তের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বি.কম, ফেনী পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, ফেনী জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী ও ফেনী লেডিস ক্লাবের সভাপতি সেলিনা আক্তার ববি, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা, সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ ফখরুল ইসলাম, ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
জয়কালী মন্দিরের প্রচার সম্পাদক অর্জুন সাহা জানান, প্রতি বছর দূর্গাপূজার সময় মন্দির উপচে পড়ত ভক্তদের ভিড়ে। এবার সেই তুলনায় মন্দিরে পূর্ণ্যার্থীদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। প্রতিবছর শোভাযাত্রা সহকারে নেচে গেয়ে, আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে বিদায় দেয়া হত দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গাকে। এবার বিধি নিষেধ মেনেই আমরা দূর্গাপূজা উদযাপন করেছি।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এক বছর পর নতুন শরতে আবার দেবী আসবেন ‘পিতৃগৃহ’ এই ধরণীতে।