ফুলগাজী উপজেলার সরকারি দপ্তরগুলো যেন এক অদৃশ্য ভারে ন্যুব্জ। দীর্ঘদিনের জনবল সংকটে এক কর্মকর্তার কাঁধে পড়েছে একাধিক দায়িত্ব। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব আর সাধারণ মানুষের সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এমন চিত্রই এখন উপজেলার নিত্যদিনের বাস্তবতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্বে পরশুরাম উপজেলার ইউএনও পদও সামলাতে হয়েছে। জনপ্রতিনিধি না থাকায় তিনি দুটি উপজেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে পরশুরামে ইউএনও যোগদান করায় সেই দ্বৈত ভার কেটেছে।
ইউএনও অফিসের বাইরেও একই দৃশ্য। পরশুরামের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ ফুলগাজীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে। ফুলগাজীর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিন পাটোয়ারী পরশুরামেও দায়িত্ব পালন করছেন। ছাগলনাইয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোমেনা বেগম ফুলগাজীতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন।
শিক্ষা খাতের অবস্থা আরও শোচনীয়। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অবসরে গেছেন এবং বর্তমানে পেনশনভোগী। তাঁর পদ শূন্য থাকায় একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দিয়ে ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তদারকি চলছে। কিন্তু তিনিও মুন্সীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। ফেনী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ ফুলগাজীর এ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুধাংশু শেখর বিশ্বাস গত বছর যোগদানের কয়েক মাসের মধ্যেই অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।
ইউনিয়ন পর্যায়েও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত। দরবারপুরে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাসুদুল হক, আনন্দপুরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ, জিএমহাটে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ এবং আমজাদহাটে সমবায় কর্মকর্তা মো. মুরাদ হোসেন—সবাই অতিরিক্ত দায়িত্বে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সচিব পদেও বারবার বদলি ও শূন্যতার কারণে কাজের গতি কমেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, একজনের কাঁধে একাধিক দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ায় সময় ও মনোযোগ দুটোই ভাগ হয়ে যায়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন, শিক্ষা তদারকি ও নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কোনো কাগজপত্র বা সেবার জন্য গেলে বলা হয় ‘স্যার অন্য উপজেলায় গেছেন’ এমন উত্তর শুনেই ফিরে আসতে হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনিরা হক বলেন, ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে যারা আছে তাদেরই সেবা দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারো যদি সেবা প্রাপ্তিতে সমস্যা থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়, এর মধ্যে সেবা প্রদান করতে হবে। নির্বাচন হয়ে গেলে সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে নিয়োগ বা বদলি করা যায় না, নির্বাচন শেষ হলে শূন্য পদে কর্মকর্তা পাওয়া যাবে।
