বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ফুলগাজী দিয়ে ভারত হতে দেশে ঢুকছে মাদকজাতীয় সিরাপ। এসব সিরাপ নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলের অনুরূপ বলে জানিয়েছে একাধিক মাদক কারবারি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনী সূত্র। এসব মাদকজাতীয় সিরাপ তৈরি হচ্ছে সীমান্তে ত্রিপুরার অননুমোদিত ওষুধ কারখানায়।

দৈনিক ফেনীর দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তেই অন্ততঃ ১০টি এসব সিরাপ তৈরির কারখানা রয়েছে। আগরতলার শান্তিপাড়া (মসজিদ পট্টি পুকুরপাড়) এলাকার কারখানাটির মালিক অমর সাহা। সীমান্ত থেকে এর দূরত্ব দুই কিলোমিটার। অন্যদিকে, দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীরামপুরে একটি কারখানায় উৎপাদিত ফেন্সিডিলসদৃশ এ সিরাপ ফেনী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। দুলাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি এই কারখানার মালিক। এছাড়াও ত্রিপুরার সোনামুরা বাজারের তিনটি ফেনসিডিল কারখানার মালিক হলেন—প্রবাল সাহা, মিহির আলী ও সেলিম মিয়া। সীমান্তের শুন্যরেখা থেকে এই তিন কারখানার দূরত্ব মাত্র ৪শ মিটার। এসব কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে নেশাজাতীয় সিরাপ এম এক্স, কার্ডিক্যাপ, ব্রনোকফ সি, চকো প্লাস ও উইন কোরেক্স। এগুলো নেশার উপযোগী করে তুলতে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক (কোডিন ফসফেট) মেশানো হচ্ছে। নেশাজাতীয় উপদান থাকায় কাশির এসব সিরাপ ইতোমধ্যে ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একজন মাদকসেবনকারী জানান, নামে নতুন হলেও এই পাঁচ সিরাপের নেশার মাত্রা ফেন্সিডিলের মতো। নতুন নামের মোড়ক লাগিয়ে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে।

সাম্প্রতি ফেনীর সীমান্তবর্তী ফুলগাজী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে কোডিন ফসফেট মিশ্রিত এম এক্স, কার্ডিক্যাপ সিরাপ জব্দ করেছেন বলে দৈনিক ফেনীকে নিশ্চিত করেছেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আমরা মাদককারবারিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় আমাদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ফুলগাজীর কমুয়া বিওপির শ্রীপুর সীমান্ত এলাকায় অভিযানে কোডিন ফসফেট মিশ্রিত প্রায় ৩০ বোতল সিরাপ আমরা জব্দ করতে সক্ষম হই। এসময় আমরা কানা শহীদ নামে একজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করি। এটির চাহিদা বর্তমানে ব্যাপক, সেকারণেই সীমান্ত দিয়ে এসব মাদক বাংলাদেশ প্রবেশ করছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে নতুন এসব মাদকের বড় বড় চালান বাংলাদেশে পাঠানোর ছক কষছে ভারতের মাদক কারবারিরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনী সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষাগারে একাধিক রাসায়নিক পরীক্ষায় এসব সিরাপে নেশাজাতীয় উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়টি ধরা পড়েছে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে পাচারকৃত ফেন্সিডিলে উচ্চমাত্রার কোডিন মেশানোর কারণেই এটি নেশার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, সীমান্ত সংলগ্ন এসব সিরাপ তৈরির কারখানাগুলো মূলত একেকটি কিচেন ল্যাব। সেখানে রাসায়নিক মাপঝোকের কোনো ব্যবস্থা নেই। চোখের আন্দাজে কোডিন ফসফেট ঢেলে তারা নেশাজাতীয় সিরাপ উৎপাদন করে। এ কারণে কোডিন ফসফেটের পরিমাণের সমতা থাকে না।

ফুলগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম দৈনিক ফেনীকে জানান, সীমান্ত এলাকায় আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স দেখিয়ে কাজ করছি।

এ বিষয়ে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন দৈনিক ফেনীকে জানান, এ জাতীয় সিরাপ বিজিবির অভিযানে এখনো ধরা পড়েনি।