ফুলগাজীতে নারী উন্নয়নে দরিদ্র-অসহায় নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে আমজাদহাট বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটের দোকানগুলো চলছে পুরুষের দখলে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় এ মার্কেটের পাঁচটি দোকানের সব কয়টি মহিলাদের থেকে হাতছাড়া হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পরিচালনা করা এসব দোকান দাপ্তরিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলছেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মহিলা মার্কেট নির্মাণ করে। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ মার্কেটের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বরাদ্দের সেই শর্ত যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয়নি এমন উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।

সরজমিনে দেখা যায়, আমজাদহাটের পুরাতন বাজারে পাঁচকক্ষের মার্কেটটি ৫ জন মহিলার নামে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে পুরুষের নামে। মার্কেটে রয়েছে হোটেল, গোডাউন ও সেলুন দোকান। বর্তমানে পাঁচটি দোকানে ইসমাইল হোসেন কালা, জসিম উদ্দিন, আবুল খায়ের সওদাগর, স্বদেব চন্দ্র সাহা ও মোহাম্মদ দুলাল নামের ব্যবসায়ীরা প্রতিমাসে মাত্র ৫০০ টাকা করে ফুলগাজী এলজিইডি অফিসে ভাড়া দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী একটি মহল হতদরিদ্র মহিলাদের নামে বরাদ্দ না দিয়ে দোকানগুলো পুরুষের নামে বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দিয়েছে। এখনো সেই নিয়মেই চলছে দোকান।

স্থানীয় একাধিক মহিলা জানান, আমরা সেলাইসহ ছোটোখাটো কিছু কাজ করছি, কিন্তু অর্থ সংকটে কোনো দোকানপাট নেওয়ার সুয়োগ নেই। মহিলা মার্কেটের দোকান এসব নারীর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্যও বাস্তবায়ন হতো।

এদিকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালায় দেখা যায়, বাজারে দোকান রয়েছে কিন্তু মানসম্মত নয় বা নিজেই দোকান চালান এমন মহিলা, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা শহিদ পরিবারের সদস্য, মহিলা নিজের বাড়িতে দোকান করেন, উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা, পরিবার প্রধান মহিলা যিনি ব্যবসা করতে আগ্রহী, অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত- এমন মহিলার মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও ফুলগাজীর এ মার্কেটে এসব মানা হয়নি।

নীতিমালায় বলা রয়েছে, কোনো দোকানঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত মহিলা ছাড়া কোনো পুরুষ পরিচালনা করতে পারবে না। উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি দোকানের প্রতি বর্গফুট হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করে দেবেন। প্রাপ্ত ভাড়ার শতকরা পাঁচভাগ সরকারকে, সাত ভাগ ভূমি রাজস্ব খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। ১৫ ভাগ মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে। বাকি ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে জমা হবে। কোনোভাবেই বরাদ্দ পাওয়া মহিলা এ দোকান অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে জানতে কথা হয় ফুলগাজী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মোহাম্মদের সঙ্গে। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, দোকানগুলোতে বর্তমানে যে পাঁচজন পুরুষ ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের নামের তালিকা আমাদের কাছে আছে, তবে তাদেরকে আমরা দাপ্তরিকভাবে বরাদ্দ দেইনি। পরিদর্শনে যাওয়ার পর দোকান পরিচালনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তাদের উপজেলা পরিষদে ডেকেছিলাম৷ তাদের কাছে বরাদ্দ ও ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেনি। পরে তৎকালীন ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া তাদের দোকানপ্রতি ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। একইসঙ্গে তাদেরকে সঠিক প্রক্রিয়ায় আবেদন করতেও বলা হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি অবগত না। বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানাতে পারব।

ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন দৈনিক ফেনীকে জানান, আমজাদহাটে এ ধরনের কোনো মার্কেট আছে কিনা আমার জানা নেই। এটি ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ পরিচালনা করছে কিনা এমন কোনো তথ্যও নেই৷ এ বিষয়ে জেনে তারপর বলতে পারব।