ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এ বছর ৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৪ জন। পাসের হার মাত্র ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, চারজন ব্যতিত সকলেই ফেল করেছে।

কলেজ সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে। এদের মধ্যে ইংরেজিতে ২৯ জন, বাংলায় ৯ জন, আইসিটিতে ২০ জন, হিসাববিজ্ঞানে ৬ জন, ফিন্যান্সে ৩ জন, অর্থনীতিতে ১৫ জন, যুক্তিবিদ্যায় ৯ জন এবং ইসলামের ইতিহাসে ৫ জন অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন এবং অতিথি শিক্ষক ১ জন, মোট ১০ জন শিক্ষক ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করেছেন। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি ৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক ছিলেন।

একাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিগত কয়েক বছর এ প্রতিষ্ঠানের ফলাফল নিম্নমুখী। ২০২৪ সালে পরীক্ষার সময় আকস্মিক বন্যাকে ফলাফল খারাপের কারণ বলা হলেও এবারও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এ উপজেলার অন্যান্য কলেজের ফলাফলেও হতাশা থাকলেও মুন্সীরহাট আলী আজম কলেজের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।

উল্লেখ্য, ফুলগাজী সরকারি কলেজে ৩০৯ জনের মধ্যে পাস করেছে ৬৩ জন, পাসের হার ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ফুলগাজী খালেদা জিয়া মহিলা কলেজে ২১০ জনের মধ্যে পাস করেছে ১০১ জন, পাসের হার ৪৮ দশমিক এক শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন। অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক সফিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগের জন্য বিষয়টি অতিরিক্ত ছিল। তবে আবশ্যিক বিষয়ে যেমন বাংলা ও ইংরেজিতে ফেল করাটা উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম ছিল ক্লাসে, গড়ে ৮-১০ জন অসত, অনেকেই চাকরি করে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আসমা বলেন, ছেলেদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। ব্যর্থতার দায় আমাদেরও। আরেক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী রাইসা বলেন, প্রশ্ন কঠিন ছিল, তবে পড়াশোনার মনোযোগের অভাবই মূল কারণ। একজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতো না, আবার পরীক্ষাও ছিল কঠিন।

পার্ট-টাইম ইংরেজি শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, আমি এক মাসের জন্য ক্লাস নিয়েছি, প্রতিদিন ৮-১০ জন উপস্থিত থাকত। অকৃতকার্যের দায় সবার।


এমপিওভুক্ত ইংরেজি শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বাজারে আছেন বলে জানান, পরে ফোন ব্যস্ত রাখায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ফেল করা ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৯ জনই ইংরেজিতে ফেল করেছে।

গভর্নিং বডির অভিভাবক প্রতিনিধি আবদুল ওহাব বাবুল বলেন, ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য মূলত কলেজ শাখার শিক্ষকদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা দায়ী। অনেক শিক্ষক সময়মতো আসেন না, ক্লাসে মনোযোগ দেন না। বরং বাজারের হাসিল আদায়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। বিগত ১৭-১৮ বছর ধরে কমিটি শিক্ষার মান উন্নয়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। কিছু শিক্ষক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করেছেন। তাদের অপসারণ জরুরি।

অধ্যক্ষ মোঃ আবু তাহের মজুমদার বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় ভর্তি সংখ্যা ধরে রাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ পাওয়া ও অন্য কলেজে ভর্তির অযোগ্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। তারা নিয়মিত ক্লাস করে না, মনোযোগী নয়, মোবাইল আসক্তি থেকেও ফেরানো যায়নি। অন্যদিকে কিছু শিক্ষকও যত্নবান হননি। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবও দায়ী।