ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলগাজীতে ২৫টি করাতকলের মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র দুইটিতে। মামলা নিষ্পত্তি ও লাইসেন্স আবেদনের অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে করাতকলগুলো চালু থাকায় এ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে আইনের চোখে অবৈধ হলেও এসব করাতকলে শত শ্রমিকের জীবন-জীবিকা চলছে।
করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী, কোনো করাতকল আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। অথচ ফুলগাজীর বেশিরভাগ করাতকলই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্সধারী করাতকল দুটি হলো মুন্সীরহাটের হাবুর টেকের আবু স মিল এবং ফুলগাজী পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন নবি স মিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লাইসেন্স পেতে ১৫ জন মালিক আবেদন করেছে। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: আনন্দপুরের ওবায়দুল হক স মিল, ইয়াসিন স মিল, মুন্সীরহাটের ইউছুফ স মিল, কবির স মিল, সাইফুল স মিল, আমজাদহাটের আবু স মিল, আনোয়ার স মিল, বেলাল স মিল, ফুলগাজী উপজেলা গেইট সংলগ্ন হালিম স মিল, মীরু স মিল, ফুলগাজী বাজার সংলগ্ন তাহের স মিল, কাদের স মিল, জলিল স মিল, ভুট্টো স মিল ও শহীদ স মিল। বর্তমানে আবেদন করা স মিলগুলোও চলছে পুরোদমে। অপরদিকে নজরুল স মিল, রাজ্জাক স মিল, হারুন স মিল, বকসি বাজারের কবির স মিল, আনোয়ার স মিল, জিএমহাটের হাসেম স মিল, ইসমাইল স মিল, আমজাদহাটের কিল্লার দীঘির জামাল স মিল পরিবেশ ও বন বিভাগের আইন অমান্য করায় মামলা রয়েছে বলে জানায় বনবিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব করাতকলের অধিকাংশই স্থাপন করা হয়েছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক, জিএমহাট অভিমুখী কেবি হায়দার সড়ক ও ছাগলনাইয়া-পরশুরাম সড়কের পাশে। করাতকল মালিকরা রাস্তা দখল করে ছোট-বড় গাছের স্তূপ রাখছেন, যা পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে, এমনকি রাস্তারও ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, কিছু করাতকল মালিক প্রভাবশালী। এ কারণে বছরের পর বছর এভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে করাতকল মালিকদের দাবি, এ শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষের জীবিকা জড়িত। মীরু স মিলের মালিক মীর হোসেন জানান, সাধারণত একটি স মিলে কমপক্ষে ৫ জন কর্মী থাকে। একজন মিস্ত্রির মাসিক বেতন প্রায় ৪০ হাজার টাকা, সহকারী মিস্ত্রি ৩০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিলসহ খরচ দাঁড়ায় মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা। পুরো উপজেলার করাতকলগুলোতে দুই শতাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলগাজী জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আগে সংযোগ দিতে এতো নিয়মকানুন ছিল না। ট্রেড লাইসেন্স ও জমির কাগজ থাকলেই সংযোগ দেওয়া হতো। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।
ফুলগাজীর এক করাতকলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত সময়ে উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নে এসব সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
বন কর্মকর্তা (পরশুরাম-ফুলগাজী রেঞ্জ) আবু নাসের জিয়াউর রহমান জানান, মামলা ও আবেদনের কারণে অনেক স মিল বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেনীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন অবৈধ। ফুলগাজীর ১৬টি করাতকলের মালিক উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। মামলাগুলো নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ, সেজন্যই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম দৈনিক ফেনীকে জানান, বন বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে তালিকা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে কাজ চলমান রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বনবিভাগের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিনিয়ত কাজ চলছে। আইনের মাধ্যমে পরিচালনা করলে প্রশাসনও তাদের সাথে থাকবে।