ফুলগাজী উপজেলায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটম গ্যারেজ। যথাযথ নিয়ম না মানায় এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার (২৪ মে) ভোর রাতে ফুলগাজী সদরে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক সংলগ্ন ওয়ার্কশপে অগ্নিকা-ের ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।
ফুলগাজী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর তারেকুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী সদরের ওয়ার্কশপে অগ্নিকা-ের খবর পাই শনিবার ভোর রাতে। প্রায় ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিভানো সম্ভব হয় বলে জানান তিনি। এতে ৭ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগতে পারে। এতে সেমিপাকা টিন সেডের ৪ টি রুমে অবস্থিত শামীম সাইকেল ওয়ার্কশপ, সেতু মটরস, সুমন ওয়ার্কশপ ও আল মদিনা কফি এন্ড ফুচকা হাউজ পুড়ে যায়। স্থানীয়রা এই টিনসেড কক্ষগুলোতে বিদ্যুত চালিত অটোরিকশার ব্যাটারি রাতে চার্জে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত সড়কে সহস্রাধিক টমটম চলাচল করে। ফুলগাজী সদর থেকে গাবতলা-মনতলা সড়ক, বক্সমাহমুদ সড়ক, দৌলতপুর, গোসাইপুর, বদরপুর, করইয়া সড়কে অসংখ্য ব্যাটারী চালিত টমটম চলাচল করে। এসকল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটম চার্জ ও রাখার জন্য পুরো উপজেলায় ৫ শতাধিক গ্যারেজ রয়েছে।
জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় প্রতিদিন চলাচলকারী প্রায় সহস্রাধিক টমটমের ব্যাটারি চার্জে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ। যান্ত্রিকভাবে চলাচলকারী এসকল টমটমের লাইসেন্স দেয়ার এখতিয়ার স্থানীয় পরিষদের না থাকায় এর সঠিক পরিসংখ্যানও ইউপি কার্যালয়ে নেই।
এলাকাবাসী জানান, এসব ব্যাটারি চার্জে আবার নেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ, বৈধ সংযোগে বিল কমাতে কৌশলে করা হচ্ছে মিটার টেম্পারিং। উপজেলায় বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান কারণ ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটম বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সমস্যা হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
ফুলগাজী উপজেলা সদরসহ ৬ ইউনিয়নে প্রায় দেড় সহস্রাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা ও টমটম রাখা ও চার্জ দেয়ার জন্য রয়েছে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্যারেজ আছে বলে জানা গেছে ।
আবুল হোসেন নামে ফুলগাজী সদরের মনতলার এক ব্যক্তি জানান, বাজার থেকে গ্রামীণ রুটে চলাচল করে প্রায় ৩ শতাধিক টমটম। রাতে ঝুঁকি নিয়ে টমটমে বৈদ্যুতিক চার্জ দেয়া হয়।
মুন্সীরহাট ইউনিয়নে পৈথারা, কামাল্লা, নোয়াপুর, বশিকপুরসহ বিভিন্ন সড়কে ২শ’র বেশি টমটম চলাচল করে। টমটমের মালিক বা চালকের বাড়িতে আলাদা গ্যারেজে চার্জ দেয়া হয়। এর সংখ্যা পুরো ইউনিয়নে শতাধিক হতে পারে বলে জানান কামাল্লা গ্রামের করিম।
জিএমহাট থেকে বশিকপুর সড়ক, শ্রীচন্দ্রপুর, শরীফপুর, লক্ষ্মীপুর, কাচারিবাজার, পাঠাননগর পর্যন্ত ৭০-৮০ টি টমটম চলাচল করে। এখানেও গ্রামের দোকান বা বাড়ির সামনে ৫০ টির মতো গ্যারেজ তৈরি করে টমটম চার্জ দেয়া হয় বলে জানান জালাল আহমদ।
দরবারপুর ইউনিয়ন আকারে ছোট হলেও মুন্সীরহাট বাজার হতে উত্তর শ্রীপুর, বরইয়া, জগতপুর, ধলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে টমটম চলাচল করে। এখানে গ্যারেজের সংখ্যা ৪০-৫০ টি হতে পারে বলে জানান করিম নামে বরইয়ার স্থানীয় একজন ব্যক্তি।
আমজাদহাট ইউনিয়ন উপজেলার পূর্ব সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় এখানে টমটম পরশুরাম -ছাগলনাইয়া সড়কে চলাচল করে। আবদুল ওহাব নামে পূর্ব বসন্তপুরের এক ব্যক্তি বলেন, গজারিয়া, বক্সমাহমুদ, বসন্তপুর, ঋষ্যমুখ, ফেনাপুস্করিণী, দেবপুর এলাকায় অসংখ্য টমটম চলাচল করে। স্থানীয়ভাবে গ্যারেজের মাধ্যমে ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক চার্জ দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফুলগাজীর এসব গ্যারেজের প্রতিটিতে ৪টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ করতে চালককে গুণতে হয় ১শ টাকা। । এতে ৭-৮ ঘন্টা ধরে ব্যাটারি চার্জের জন্য কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় এই পরিসংখ্যান নেই।