মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ফুলগাজী উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার গড়ে তোলার তথ্য পাওয়া যায়নি। স্কুল বা কলেজপর্যায়ে যেসব পাঠাগার রয়েছে তাতে প্রয়োজনের তুলনায় বই অপ্রতুল বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী। সর্বসাধারণের জন্য একটি গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা গড়ে না ওঠার পেছনে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে এসব শিক্ষার্থীরা।

ফুলগাজী মহিলা কলেজের (প্রস্তাবিত খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ) অধ্যক্ষ আশিষ লোধ বলেন, সফল মানুষরা বই পড়ে সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ডিভাইসে আসক্তি দূর করতে বইপড়া ও একটি গ্রন্থাগার খুবই প্রয়োজন।

ঢাকায় কর্মরত জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা, ফুলগাজীর সন্তান ওয়াসিম মজুমদার বলেন, বই পড়ে মানুষ দেউলিয়া হয় নাÑএই কথাটি স্মরণ করে আকাশসংস্কৃতি থেকে বের হতে না পারলে এ প্রজন্ম জ্ঞান অর্জন করা দুরূহ হবে। বইয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা একটি ধর্য্যশীলতা, একটি অধ্যবসায় উল্লেখ করে বলেন, বইয়ের পড়ায় মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। অথচ ফুলগাজীতে একটি গ্রন্থাগার নেই ।

একসময় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও লাইব্রেরিতে বই খোঁজ করে পড়তে বসতো। সমাজনীতি, রাজনীতির আমুল পরিবর্তনে যেন এসব এখন সেকেলে আদর্শ বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক নেতা। তিনি বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রতি আশাবাদী হয়ে বলেন তারা নিশ্চয়ই আগামী পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর কিংবা ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার বিষয়টি সামনে এলেও আগের মতো বই পড়া হারিয়ে গেছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার থেকে শর্তাদি মেনে বাড়ী নিয়ে বই পড়ে তা ফেরত দিতো।

ফুলগাজীতে একটি গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তায় ২০২৩ সালে ২২ জানুয়ারি দৈনিক ফেনীতে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর আশ্বাস আলোর মুখ দেখেনি।

একাধিক শিক্ষক, উচ্চশিক্ষায় জন্মস্থানের বাইরে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ফেনীর ১৫ কি.মি. উত্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এলাকা হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী উপজেলা। ঐতিহ্যবাহী উপজেলায় নেই কোন গণগ্রন্থাগার, যার ফলে আধুনিক জ্ঞানচর্চায় বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। ১৯৭১ সালে এ অঞ্চলে ব্যাটল অব বিলোনীয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীপ্তিমান। মুক্তিযুদ্ধে মুন্সীরহাটের উজির আলী মোক্তার বাড়ি থেকে চিথলীয়া, পরশুরাম, বিলোনীয়া পর্যন্ত ফুলগাজীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় স্মৃতি নিয়ে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। সেসব বই উপজেলা সদরে নির্দিষ্ট কোথাও সংরক্ষণের চেষ্টা নেই।

এ প্রসঙ্গে ফুলগাজী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত একজন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠাভ্যাস করতে হবে। এ বিষয়ে অনেকের কাছে আবেদন করেও প্রত্যাশিত জবাব পাইনি। তিনি বলেন, আন্তরিকতা ও উদ্যোমী আত্মবিশ্বাসী মানুষের পক্ষে উপজেলা সংলগ্ন সরকারি অনেক জমি বিদ্যমান আছে সেখানে সেখানে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

ফুলগাজীতে গণগ্রন্থাগার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম দৈনিক ফেনীকে বলেন, আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ৬ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ফুলগাজী উপজেলা। এই উপজেলায় সরকারি হাই স্কুল ১টি, বেসরকারী হাইস্কুল ২০টি, বালিকা বিদ্যালয় ২টি, দাখিল মাদ্রাসা ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৩টি। এছাড়া রয়েছে বেসরকারি কেজি স্কুল, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা। ৮৫টি গ্রাম ও ৭৯টি মৌজায় এ উপজেলার শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ।