ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট-গাবতলা সড়ক, এর দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। সীমান্তবর্তী সড়কটি একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত। মুক্তিযুদ্ধে একাধিক বীরের জন্ম এ অঞ্চলে। তবে, সড়কটি এখন দুরাবস্থা, চলাচলে ভোগান্তি এবং একই সড়কে দুই দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায়।

২০২৪ সালে পরপর তিনদফা বন্যায় বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কটি। দুই ধারে প্রায় ১৫টি গ্রামের ২০ সহস্রাধিক মানুষ, বিজিবি ক্যাম্প, দুইটি উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুরু হয় ভোগান্তি।

উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭ লক্ষাধিক টাকার প্রস্তাবনা থাকলেও ৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ হয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংস্কার কেবল নামে হয়েছে, ভোগান্তি আগের মতোই রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইভা এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামতের কাজ করলেও মার্চে সড়কটি ভেঙে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুন্সীরহাটের দঃ শ্রীপুর- কুতুবপুর, লুতু ভূঞা বাড়ী, গথিয়া খাল সংলগ্ন সড়ক ও কমুয়া- পৈথারাস্থ সিলোনীয়া নদীর কুল ঘেঁষে পৈথারা ও কামাল্লা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিঃ মিঃ এ সড়কটিতে ইটের খোয়া উঠে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় চলাফেরায় ফের দুর্ভোগের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের নামে কিছুই হয়নি। ইট-সুড়কি দিয়ে চলে গেছে। এখন টমটমে পথ চলতে লোকজনের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক টমটম ও সিএনজি চালক সড়কের এ দূরাবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দক্ষিণ তারালিয়া গ্রামের বাসিন্দা টমটম চালক আলিমুল্লা বলেন, কী সংস্কার করেছে, কোথায় করেছে আমরা জানি না। ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। পৈথারা গ্রামের জনৈক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা দূর্ভাগা, সবাই আমাদের নিয়ে বাণিজ্য করে।

ইরান নামে তারালিয়া গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, এই সড়কের লুতুভূঞা পুকুরের ১৫-২০ ফুট ভাঙা অংশে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর কোথাও সংস্কার বা মেরামত দেখিনি।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মোঃ ইউছুফকে মুঠোফোনে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক দেখার দায়িত্ব কে দিয়েছে? পরে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আমার হলেও স্থানীয় লোকজন এই কাজটি করছে। আমি শুধু তাদেরকে চেক দিয়েছি, এর বেশি কিছু জানি না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, কাজের মান ভালো হয়েছে। বরাদ্দ ও ড্রয়িং অনুযায়ী এক নম্বর ইট দিয়ে কাজ হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিবেদককে এদিকে সময় নষ্ট না করার পরামর্শ প্রদান করেন।

অন্যদিকে মুন্সীরহাট থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে এলজিইডির এই সড়কে বন্যায় ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় হতে বাস্তবায়নাধীন ব্রিজের কাজ পায় তুলোতুষি এন্টারপ্রাইজ। প্রশ্ন উঠেছে, এলজিইডি সড়কে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় কাজের অনুমতি পেলো কিভাবে?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ব্রিজের কাজ একসপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাজীব আহমেদকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সড়কে অন্য বিভাগ কাজের অনুমতি প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মাদ বলেন, কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এলজিইডি থেকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।এলজিইডির আপত্তি থাকলে হয়তো সম্ভব হতো না। জরুরী মনে করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়কে কাজ করতে হচ্ছে।