১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন সামরিক শাসক ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের ৩৩ বৎসর পরে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানে দেড় যুগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের ‘স্বৈরাচার আখ্যা’ পাওয়া ৭৬ বৎসরের প্রাচীণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ৭৮ বৎসর বয়সী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী চলমান হতাহতের মধ্যে ভারতে চলে যায়।

সারাদেশের মতো ফুলগাজী উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আত্মগোপনে থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে পড়েন। ফুলগাজীর প্রত্যন্ত অঞ্চল তখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আয়ত্তে চলে আসে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী শূন্য ফুলগাজীর মাঠে চষে বেড়ায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ভয়াবহ বন্যায় এ দুটো দলের শীর্ষ নেতারা ফেনীর উত্তর জনপদ পরিদর্শন করে মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে। উপজেলা ও থানা প্রশাসনের সাথে থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে দিনরাত জনপদে পরিশ্রম করে। ফলে ফুলগাজী উপজেলায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছাড়ার দীর্ঘ ৭ মাসে প্রতিপক্ষের উপর কোন উল্লেখযোগ্য হামলার ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয় নি।

প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দূরত্ব আপাতত দেখা গেলেও উপজেলার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে অবস্থান করে রাজনীতির সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

১৬ মার্চ রাতে বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন ভুঞা ও যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রসুল গোলাপ মজুমদারের সমর্থকদের মধ্যে হামলার অভিযোগের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ভৌগোলিক অবস্থানে প্রভাবশালী বিএনপির এই দুই নেতা একে অপরকে দোষারোপ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

ফেসবুকে প্রচারিত সংবাদে দেখা যায়, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন ভুঞা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ঘোষিত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেউ ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দেয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অপরদিকে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তাকে ভালোবাসে এমন কর্মী সমর্থকরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রসুল গোলাপ। একে অপরের এমন বাক যুদ্ধের মধ্যে আশাজাগানিয়া হলো দুই নেতা একস্থানে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম স্বপন ও যুবদলের আহবায়ক ফরিদ আহমেদ ভুঞার উপস্থিতিতে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ অবসান হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাঁধে কাঁধ ধরে ছবি প্রচারিত হয়।

সম্প্রতি একটি ইউনিয়নের বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদককে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার ও অভিযুক্তের ফেসবুকে বিবৃতি ও পরবর্তী সময়ে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে এক রকম রাজনৈতিক খোশগল্পে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে একই দলের প্রতিপক্ষেকে ঘায়েল করতে পুলিশ কেইসের স্লিপ নেওয়া আবার প্রতিপক্ষের সমর্থকরা জয়বাংলা শ্লোগান দেয়ার অভিযোগ নিশ্চয়ই স্থানীয় রাজনীতিকে বন্ধুর পথে নিয়ে যাবে। জয়বাংলা শ্লোগান দেয়া ছাত্রলীগের কর্মীরা একে অপরকে ফুল দিচ্ছে এমন ছবিও যখন ফেসবুকে দেখা যায় তখন উপজেলার এই হেভিওয়েট নেতাদের ছাত্রলীগের কর্মীরা বিএনপিতে আশ্রয় নিয়েছে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে উভয় নেতার দীর্ঘ ৭ মাস সময় লেগেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তারুণ্যের চিন্তাধারার ক্রমগতি বুঝবার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা দূরদর্শি ঘোষণা কী স্থানীয় বিএনপি হৃদয়ে ধারণ করে না।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম রসুল মজুমদার গোলাপ ফেসবুকে উল্লেখ করেন ‘আমার কর্মী সমর্থকবৃন্দ যারা আমাকে ভালোবাসেন ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতেছি কেউ কারো বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন না।

সাম্প্রতিক বিষয়ে সদস্য সচিব আবুল হোসেন ভুঞা ফেসবুকে লিখেন- ‘আমার সমর্থেন যারা আছেন ফেসবুকে কারো বিরুদ্ধে কোন কিছু লেখার প্রয়োজন নাই’।

ফেনী জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ১১টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম স্বপন বলেন, ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে দলকে গতিশীল করতে জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে একটি বর্ধিত সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।