স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কার্যাদেশ ছাড়াই ফুলগাজী সরকারি কলেজ এলাকায় ৮২৫ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি সড়কের বেশিরভাগ সংস্কার কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা কাজটি করছেন, এ ব্যাপারে এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক কোন তথ্য দিতে না পারলেও উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, কেউ যদি স্ব প্রণোদিত হয়ে কাজটি করে থাকেন, সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়, আমাদের নয়। বিষয়টিকে ইতিবাচক ভেবেই কাজে বাধা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক সংস্কারের বড় অংশ শেষ করেছেন স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত মামা শহীদ নামে এক ব্যক্তি।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী সরকারি কলেজ রোডে ৮২৫ মিটারের এ সড়কটি প্রথমে কার্যাদেশ পান মেসার্স ভূঞা অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী ফারুক। কিন্তু জমা দেওয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে তা বাতিল হলে দ্বিতীয়বারের দরপত্রে কার্যাদেশ পান মেসার্স ওয়ান অ্যান্ড ওয়ান ট্রেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক জামানত জমা দিতে না পারায় ফের তা বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ আবারও ই-টেন্ডারে ওয়ান অ্যান্ড ওয়ান ট্রেডের স্বত্বাধিকারী হাসানুজ্জামান ভূঞা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) জমা দিয়েছেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ করে এ প্রতিষ্ঠানটির এলজিইডির কার্যাদেশ পাওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী হাসানুজ্জামান ভূঞা বলেন, কার্যাদেশ না পেয়ে কেউ সড়কের কাজ করার সুযোগ নেই। সড়কটিতে কেউ গোপনে কাজ করছে কিনা তা জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি), ফুলগাজী উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, স্বাভাবিকভাবে কার্যাদেশ পাওয়ার পরেই কে কাজ করবেন তা আমরা জানতে পারি। পরবর্তী সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সড়কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে।

কার্যাদেশ ছাড়া সড়ক সংস্কার কাজ করা যায় কিনা প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি স্ব প্রণোদিত হয়ে কাজ করে তাহলে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়, আমাদের দেখার বিষয় নয়। আর সে (মামা শহীদ) যেহেতু স্ব প্রণোদিত হয়ে রাস্তার দুপাশে বেঁধে দিচ্ছেন, বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। সেজন্য কাজে বাধা দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে সরকারি সম্পদ অনুমতি ছাড়া এভাবে ব্যবহার বা সংস্কার কাজে আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও এ সড়কে এসবের তোয়াক্কা করছেন না কেউই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ আরও বলেন, এই ধরনের আইনের বিষয়ে অবগত না। তবে রাস্তার যেহেতু ক্ষতি করছে না, তা ইতিবাচক বিষয়। যদি রাস্তার ক্ষতি হতো তাহলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হতো।

কার্যাদেশ ছাড়া সড়কের কাজ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেসার্স সামছুল হক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সামছুল হক বলেন, আগেই এ সড়কের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু মেসার্স ওয়ান অ্যান্ড ওয়ান ট্রেডার্স তখন টাকা জমা দেয়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি সড়কের কিছু কাজ করেছি। এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক দৈনিক ফেনীকে বলেন, ওই সড়কের দরপত্রের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। কার্যাদেশ বা অনুমতি ছাড়া সড়কের কাজের ক্ষেত্রে আইনি বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আগে কখনো এমন কিছু হয়নি। সেজন্য এমন আইনের চর্চা নেই।