শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যাওয়া মাছ, গরু, মুরগি খামার ও ডিপার্টমেন্টাল সুপারশপ সহ বহুমুখী প্রকল্পের উদ্যমী এক সফল উদ্যোক্তা মুন্সীরহাট ইউনিয়নের কমুয়া গ্রামের আবদুল করিম ও তাদের অংশীজন। ২০১২ সালে ৩০ জনের সম পরিমাণ অর্থে অংশীদারীত্ব চুক্তিতে কমুয়াতে ১৬শ শতক বা স্থানীয়ভাবে ৪০ কানি ক্রয়কৃত জমিতে এ বিশাল খামার গড়ে তোলেন। ১০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগকারীদের কমুয়া এগ্রো কমপ্লেক্স নামে প্রতিষ্ঠিত এ খামারের চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার হলেও আয়-ব্যয়, পুঁজি বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানিতে সকল শ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে আগলে রেখেছেন এ কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল করিম। এজন্যই স্থানীয়রা ছাড়াও বাইরে লোকজনের কাছে এটি করিমের খামার নামে পরিচিত লাভ করে।

ব্যংক, বীমা কিংবা সমবায় সমিতি কারো কাছে ধর্ণা না দিয়ে বা সরকারি রেজিষ্ট্রেশনের এর অপেক্ষা না করে শুন্য থেকে তিলে তিলে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বর্তমানে শত লোকের প্রচেষ্টার ফসল কমুয়ার এ এগ্রো কমপ্লেক্সটি এবারের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। প্রতি শিফট ২০ জন কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিশাল আয়তনের এক চৌহদ্দির মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটিতে উন্নত জাতের গরু ছিল ২৫টি, ৬০টি ছাগল, ১৫ হাজার লেয়ার মুরগি ও ৯টি পুকুরের চাষকৃত মৎস্য সবকিছুই সর্বনাশা মুহুরি, সিলোনীয়া ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি কেড়ে নিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে আলাপকালে দৈনিক ফেনীর এ প্রতিবেদককে এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল করিম বলেন, গরু,ছাগল ও মুরগীর ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। তিনি বলেন, ৯টি পুকুরের ৩০ লক্ষ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে যায়। ৮/১০ কানির রোপনকৃত ধানের ক্ষতি ৫০ হাজার টাকা। করিম বলেন, জনপ্রতি অর্ধ লক্ষ টাকায় ১ শত মানুষের শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে উঠা সুপার শপের ক্ষতি হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত দধি ও মিষ্টির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এসব দধি, মিষ্টি স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা হতো। এতে ক্ষতি হয় ২ লক্ষ টাকা। বিশাল এই খামারটিতে শ্রমিক কর্মচারী ও নিয়মিত ২ জন নাইটগার্ড বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছে। এসকল শ্রমিক কর্মচারীদের পিছনে ফার্মের ব্যায় হয় ৩ লক্ষাধিক টাকা। কয়েকজন কর্মরত কর্মচারী ও শ্রমিকের সাথে কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে অর্থাভাবে দিনাতিপাত করছেন।

কমুয়া এগ্রো কমপ্লেক্সের এমডি করিম বলেন, প্রতিদিন শুধু ১৩ হাজার ডিম বাজারজাত করে গড়ে ২৬ হাজার টাকা আয় করা হতো। তিনি বলেন, ব্যাংক হতে ঋণের জন্য চেষ্টা করা হবে। আবদুল করিম শতাব্দীর এ ভয়াবহতম দূর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এ এগ্রো কমপ্লেক্সের বহু মানুষের রুটি-রুজির এই খামারটিতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।