ফুলগাজীতে ভয়াবহ বন্যায় মাথা গোঁজার একমাত্র মাটির ঘর হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তারালিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক আফসার। অনেকের মতো বন্যা কেড়ে নিয়েছে তার মাটির তৈরি ঘরটি।
আফসার স্যার নামেই সকলের কাছে পরিচিত। মুন্সীরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তারালিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। স্কুল জীবন থেকে তিনি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন বলে তার গ্রামের মানুষ নির্দ্বিধায় বলেন। ফুলগাজী উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে ফেনী জেলা পর্যন্ত একজন ভালো মানের ফুটবলার হিসেবেও রয়েছে ২ ছেলে ও একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক মাস্টার আফসারের সুনাম। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে একমাত্র মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
২০১৮ সাল থেকে বর্তমানে তিনি জিএমহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সাড়ে ১৭ বছর ধরে দীর্ঘ সময় ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ মাস্টার কাজী আফসার উদ্দিন ১৯৯৯ সালে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম সাহেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
গত ২২ আগস্ট মধ্য রজনীতে যখন সকলের মতো বৃদ্ধা মা-বোনকে নিয়ে ঘুমের ঘোরে ঠিক তখনই সর্বনাশা মুহুরি, সিলোনীয়া ও কহুয়া নদীর পানি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা মাস্টার কাজী আফসার উদ্দিনের মাটির ঘরটি মাটিতে মিশিয়ে দিলো। হতবিহ্বল মাস্টার বৃদ্ধা মা-বোনকে পাশের আধা পাকা রান্না ঘরের মেঝেতে ইটের উপর ইট দিয়ে মা-বোনকে রক্ষার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন। বর্তমানে গৃহহারা আফসার মাস্টার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিনে দৈনিক ফেনীর এ প্রতিবেদক গিয়ে কথা বললে আলাপচারিতায় সর্বনাশা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জীবনের কথা আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না জাড়িত কণ্ঠে তুলে ধরেন মাস্টার কাজী আফসার উদ্দিন। তিনি বলেন, সে দিন মধ্য রাতে সীমানা প্রাচীরের ভিতরে মাটির ঘর (গুদাম ঘর) থেকে জীবন বাঁচানোর আওয়াজ যেন পানির শব্দে বিলীন হয়ে যায়।
স্কুলে শিক্ষকতা করে যেটুকু সম্বল তা দিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে হয়। প্রয়াত পিতার হাতে গড়ে তোলা মাটির ঘরটিও পরিবর্তন করতে গিয়ে বারবার পিছু হটেছি। বর্তমানে মাটির ঘরই যেন আমাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
মাস্টার কাজী আফসার উদ্দিন নিজের কষ্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন ৯০ বছর বয়সী প্যারালাইজড্ আক্রান্ত মা ও ৭০ বছর বয়সী আলী আজম স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা রৌশন আরা বেগমকে পাকাযুক্ত একতলা রান্নাঘরে নিয়েও বাস করা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। ইটের উপর ইট দিয়েও পানি থেকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। দঃ তারালিয়ার আমিনুল হক চৌধুরী মঞ্জু, ছবুরা খাতুন, আবদুল আউয়াল, সাগর,কৃষক নুরুল ইসলাম, নুরুন নবী, হাসেম মিয়া,আজাদের এমন আরো ৯টি মাটির ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।
এ গ্রামের ঐতিহ্য মাটির ঘরে বসবাসরত আরো ১০ জনের ঘরই পানিতে তলিয়ে গেছে। মাটিতেই মিশে গেছে এ পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার স্বপ্ন।