ফুলগাজী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৫৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অনলাইনে মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১ বিষয়ে অকৃতকার্য ২ জন, ২ বিষয়ে ৫ জন ও ৩ বিষয়ে ৮ জন।মানবিক বিভাগে ১ বিষয়ে ২১ জন ২ বিষয়ে ১২ জন ও ৩ বিষয়ে ৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। সর্বমোট ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের ৫৬ জন শিক্ষার্থী এক থেকে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। সকল বিষয়ে পাস করেছে ৭ জন। অর্থাৎ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ১ থেকে ৩ বিষয় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তালিকা করা হলে ৬৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে ১৫৩ জন। সকল বিষয়ে ফেল বা অকৃতকার্য হয়েছে ৯০ জন। দ্বাদশ শ্রেণিতে সকল বিভাগের মোট শিক্ষার্থী ২৬৪ জন। তন্মধ্যে ১৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ভর্তি হয় ২৬৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মানবিক বিভাগে ১৫০ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১১৪ জন। প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৯৬ জন ও নির্বাচনী (টেষ্ট) পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৫৩ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় দৈনিক ফেনীর এ প্রতিনিধির সঙ্গে। তাদের ভাষ্যমতে, কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এর পরীক্ষার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তারা পায়নি। এ ছাড়া পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন ছিল। এসব কারণে তাদের পরীক্ষা ভালো হয়নি।
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় আগামী ৬ জুন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণের কার্যক্রম শুরু হবে। যদিও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হতে ৯ জুন পরীক্ষার ফরম পূরণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ।
এ বিষয়ে মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের মজুমদার বলেন, শিক্ষকেরা নিয়মত ক্লাস নিলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাস নিয়মিত করে না। শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফল বিপর্যয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক কাদের দায় এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন দায় সকলের, আমিও এর দায় এড়াতে পারি না। শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদানে অমনোযোগিতার কারণে ফলাফল এমন হয়েছে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ পেলে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, একজন শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ হলে হবে না, একাধিক শিক্ষার্থীর এমন অভিযোগ নিশ্চয়ই ভেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন আমরা তো সব সময় তাদের (ছাত্রদের) পাঠদান করার চেষ্টা করছি।
দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ার ফলে ফলাফল খারাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, এমন প্রশ্নপত্র ফাইনাল পরীক্ষায় হলে ছাত্রদের নিশ্চয়ই উত্তর দেয়ার প্রয়োজন। তিনি শিক্ষার্থীদের অমনোযোগী হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের ক্লাসেও অনিচ্ছা। পরীক্ষা দিতেও অনীহা। এভাবে পড়ালেখা করলে তো পাস করা সম্ভব নয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে সামনের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের বারবার এসব বোঝানোর চেষ্টা করছি।
এদিকে সম্প্রতি মুন্সীরহাট আলী আজম স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ১২ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উর্ত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েও তা স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানান, বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের প্রয়োজনে স্থগিত করে নিয়োগ কমিটি।
উল্লেখ্য, শত বছরেরও অধিক প্রাচীণ এই বিদ্যাপীঠ স্থাপিত হয় ১৯০৬ সালে। এ বছরের ২৮ জানুয়ারি শতবর্ষ উদযাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেনী-১ এর সাংসদ শিরিন আখতার। প্রাচীণ এই বিদ্যাপীঠের সভাপতি হলেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি ও সঞ্জরী গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল্লাহ ।
শত বছরের প্রাচীণ জ্ঞানের এই বাতিঘরের মাধ্যমে এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মঈনুদ্দিন কাজল, বর্তমান অতিরিক্ত সচিব আনিস মাহমুদ, আবু সাঈদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহালম ইসমাইল, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদ উদ্দিন সিহাব, সাবেক ব্যাংকার এটিএম ফারক, আবেদুর রেজা রিজু, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের সাইফুর রহমান চৌধুরী, ডাঃ ফরহাদসহ জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা।