টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষন ও উজানের পানির তোড়ে ফুলগাজী ও পরশুরামের মহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুইটি স্থানে ভেঙ্গে ১২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। গতকাল সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে কহুয়া নদীর পানি বিপদসীমার ১৪০ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার। তিনি দৈনিক ফেনীকে জানান, আমরা ভাঙ্গন স্থলে গিয়ে বাঁধ রক্ষার্থে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। পানি নেমে গেলে দ্রুত ভাঙ্গনস্থল সংস্কার করা হবে।
অন্যদিকে ফুলগাজী জয়পুর এলাকা দিয়ে মহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৬টি গ্রামের মানুষ কার্যত পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ঘনিয়ামোড়া এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে আমজাদহাটের মনিপুর সহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উজানে ভারী বর্ষন অব্যাহত থাকলে বন্যা কবলিত মানুষের দূর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আংশকা স্থানীয়দের।
ফুলগাজীতে বারবার বন্যা ও বন্যার্তদের জন্য সরকারের ত্রাণ বরাদ্দ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফেরদৌসী বেগম বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যাকবলিত ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর, ঘনিয়ামোড়াসহ প্লাবিত হওয়া ৬টি গ্রামে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দপ্তর থেকে দশ মেট্রিক টন চাল ও ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানান ইউএনও। ইউএনও বলেন, ফুলগাজীর বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ ত্রাণ ও নগদ অর্থের চেয়ে বারবার ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষাকল্পে মুহুরি নদীর টেকসই বাঁধ নির্মাণে জোর দাবী জানান। বরাদ্দকৃত চাল ও অর্থ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ইউএনও।
বন্যার পানিতে ২০০ হেক্টর আমন ফসলী জমির ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জানান, বন্যার পানি নেমে গেলে বানি বীজ ও প্রণোদনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেয়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জ্বল বণিক জানান, বন্যায় জয়পুর এলাকার ৮০টি পুকুরের ১৬ হেক্টর এলাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বানভাসি মানুষের জন্য চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বন্যায় প্রতিবছর এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরী।
অন্যদিকে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে ফের প্লাবিত হয়েছে ৬টি গ্রাম। গতকাল সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ঢুবে যায় এলাকার ফসলি জমি এবং প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়ে। এরআগে গত জুলাই মাসে একই এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ৫টি গ্রাম।
বিকালে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দত্ত, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী দৈনিক ফেনীকে জানান, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাতকুচিয়া এলাকায় কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে সাতকুচিয়া, টেটেশ্বর, সলিয়া, চিথলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আলমগীর নামে এক যুবক বলেন, সকালে কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল স্রোতে উজানের পানি নেমে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘরটি পানিতে তলিয়ে যায়। উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে সবকিছু রেখেই বের হয়েছি। তিনি বলেন, চলতি বছরে সাতকুচিয়া এলাকায় ৩ বার প্লাবিত হয়ে বহু ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।