ভারত থেকে নেমে আসা হঠাৎ পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২টি স্থানে ভেঙে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় ২শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম।
রবিবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইউএনও জানান, এখন ভাঙ্গনের স্থান দিয়ে প্রবল বেগে এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দৌলতপুর এলাকার মোহাম্মদ উল্যাহর বাড়ির পাশে বাঁধের ৫০-৬০ ফুট অংশ ভেঙ্গে প্রবল বেগে গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। একই রাতে দক্ষিণ দৌলতপুরেও বাঁধের একটি স্থান ভেঙ্গে পড়ে। এর ফলে দক্ষিন দৌলতপুর ও ঘনিয়ামোড়া, শাহাপাড়া, শ্রিপুরসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
চেয়ারম্যান জানান, এর আগে গত জুলাই মাসে বাঁধ আরেকবার ভেঙ্গেছিল। এবারও সেই একই স্থানে বাঁধ ভেঙ্গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার যথাসময়ে মেরামত না করায় সেটি পুনরায় ভেঙ্গে পড়ে।
বন্যা পুর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বিপদসীমার ১০ সেমি উপরে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদান জানান, আজ সকালে পাউবো’র কর্মকর্তার ভাঙ্গনের স্থান পরিদর্শন করেছেন। প্রবল পানির স্রোতের ফলে ভাঙ্গনের স্থান মেরামত করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে মুহুরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলে দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা হবে।
ফাটল দেখা দেয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরও বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনের স্থানগুলো দিয়ে এখনও প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। অন্য কোন স্থানে যাতে ভাঙ্গন সৃষ্টি না হয় সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিস্তীর্ণ জমির রোপা ও শীতকালিন শাক সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোহাগ ও নুর আলম নামে স্থানীয় দুই যুবক জানান, আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি কিন্তু নদীর বাঁধ ভাঙ্গনের কবল থেকে এখনো রক্ষা পাইনি। ভাঙ্গনের কিছু স্থানে নামমাত্র মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, আবার বর্ষা হলে তা হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে। প্রতি বছর আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের সব পানির নিচে তলিয়ে যায়।