মানুষ বনাঞ্চল ধ্বংস করে লোকালয় তৈরি করছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ। এছাড়াও কিছু প্রজাতির প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ এখনো পুরোপরি বিলুপ্ত না হলেও অচিরেই বিলুপ্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন-
১। কাক:
শুনতে অবাক লাগলেও এইটাই সত্য যে নগরপক্ষী কাক এখন আর আগের মত দেখা মিলে না। আপনি কি জানেন! এই পাখি রূপে প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আপনার আমার নিকৃষ্ট শহরকে উৎকৃষ্ট রাখার লক্ষ্যে দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষকদের ভাষ্য মতে- খাদ্যে প্লাস্টিক এবং প্রজননের অভাবে দিন দিন এই কাক শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। ফলে কাক আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।
২। বটগাছ:
প্রাকৃতিক রক্ষা কবচ ও সৌন্দর্যের আধার বটগাছ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে-প্রাচীন এই বৃক্ষ । কিন্তু একটা সময় ছিল যখন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঘেরা ছিল এই বটগাছ, তাছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণ,বায়ু পরিশোধন,মানসিক প্রশান্তি ও প্রাণীকূলের বাস্তুতন্ত্রের বিরাট ভূমিকা রেখে আসছে বটগাছ। কিন্তু আমরা বটগাছ রোপণ করি না যদিও আপনা-আপনি মাটিবেদ করে উঠে সেটাও উপড়ে পেলে দিই,ফলে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে এই বটগাছ।
৩। জোনাকি পোকা:
জোনাকি পোকার বিচরণ এখন আর আগের মতো দেখা মিলে না। কিন্তু একসময়ে গ্রাম-গঞ্জে, বন জঙ্গলে, পুকুর পাড়ে ঝোঁপঝাড়ে রাতে দেখা মিলতো প্রাণীজ বিদ্যুৎ খ্যাত জোনাকি পোকার। কালের ক্রমবিকাশে, কৃত্রিম আলোর অত্যাধিক ব্যবহার, কীটনাশক এর ব্যবহারের এবং ঘনবসতির ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে অন্ধকারের এই অপার সৌন্দর্য।
৪। তালগাছ:
ক্রমান্বয়ে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তের পথে পরিবেশবান্ধব ও বজ্র প্রতিরোধক তাল গাছ। গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তাল গাছের দেখা মিলতো একসময়ে। এখন আর আগের মতো তাল গাছের দেখা মিলে না এবং কি আমরা রোপণও করি না। ফলে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত এই বজ্র প্রতিরোধক তাল গাছ।
৫। খাল-বিল ও জলাশয়:
নদীমাতৃক বাংলাদেশে আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নদ-নদী,খাল-বিল ও জলাশয়। তবে শোচনীয় হলেও সত্য যে, অবৈধ দখল, দূষণ ও পলিথিনের আগ্রাসনে হারিয়ে গেছে অধিকাংশ খাল-বিল ও জলাশয়। এমনকি হারিয়ে যেতে বসেছে অধিকাংশ নদ-নদীর সুপেয় জল।
৬। মাছের বিভিন্ন প্রজাতি:
এমন একটা সময় ছিল যখন বর্ষা মৌসুম এলেই খাল-বিল, নদী, জলাশয় পরিপূর্ণ হত নানা প্রজাতির মাছে।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আগের মতো বিভিন্ন প্রজাতির স্থানীয় মাছ এখন আর পাওয়া যায় না। জমিতে রাসায়নিক সার, কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, নদী ও জলাশয় ভরাট এবং পানিতে প্লাস্টিক দূষণের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন বিলুপ্তির পথে।
সর্বোপরি আমাদের সকলেরই উচিত মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসা। না হলে অচিরেই আমরা হারাবো আমাদের বাসযোগ্য নির্মল এই বসুন্ধরা।
লেখক:
সামাজিক ও পরিবেশকর্মী
প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক
পরিবেশ ক্লাব অব ইয়ুথ নেটওয়ার্ক