পবিত্র ঈদুল আযহার পরের দিন গত ১৮ জুন ২০২৪ দুপুর ৩:০০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ফেনী জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রথম ঈদ পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অবস্থান। এটি মাত্র তিন-চার দিনের চিন্তাপ্রসূত একটি অনুষ্ঠান। মূলত হোয়াটস্যাপ গ্রুপ খুলে পরিচিতজনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পূর্নর্মিলনীর প্রস্তুতি নেয়া হয়। যারা যারা গ্রুপে যোগ দিয়েছেন বেশিরভাগেই ছিলেন প্রায় অপরিচিত। ফলে কে কে সাড়া দেবেন, ঈদের পরদিনই-বা কতজন উপস্থিত থাকবেন এ নিয়ে শঙ্কা ছিল। তিন সংসদ সদস্য সত্যিই কি উপস্থিত থাকতে পারবেন, তা নিয়েও শঙ্কা ছিল। কিন্তু সকল শঙ্কাকে অগ্রাহ্য করে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ফেনীর সরকারি কর্মকর্তারা সেদিন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষকে মুখরিত করেছেন নাড়ির টানে, ঐকান্তিক আন্তরিকতায়। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন যুগ্ম সচিব একেএম কামরুল হোসেন, যুগ্ম সচিব সামসুল হক দুলাল, এসপি জসিম উদ্দিন, ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, প্রমুখ। আর কেবল সম্মেলন কক্ষ ব্যবহারই নয়, সার্বিকভাবে উপস্থিত থেকে ঈদ পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানকে সম্মেলনকে সফল ও সার্থক করার জন্য আন্তরিকভাবে সশরীরে ঈদের পরদিন সর্বক্ষণ উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। তিনি অন্য জেলার অধিবাসী হলেও তার কথায়, কাজে ও প্রত্যয়ে ফুটে উঠেছে তিনি যে জেলায় কাজ করেন, সে জেলার অধিবাসী হয়েই কাজ করেন, যেমনটা দেখা গেছে ফেনী জেলার ক্ষেত্রে। মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি তা প্রমাণ করেছেন।

ফেনী জেলার তিন সংসদ সংদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম, নিজাম উদ্দিন হাজারী, ও লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের জেলা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁঞা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন, এ.কে.এম. ফজলুল হক আরিফ (এনবিআর), মনসুর আহমেদ বিপ্লব (এনএসআই), বান্দরবান বন বিভাগের ডিএফও আবদুর রহমান, ড. গিয়াস উদ্দিন (পিডব্লিউডি), শেখ সালেহ আহাম্মদ (যুগ্মসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), যুগ্মসচিব কামরুল ইসলাম (বিআরটিএ), জসিম উদ্দিন (এসপি/ডিসি), আমিনুর রাশিদ চৌধুরী (এলজিইডি), রফিকুল হক (ডিডিএলজি), মাহমুদুল হাসান (এসি/সিএমপি), মাসুদ আহমেদ শিহাব (সিএমপি), মাহতাব হোসেন (এএসপি), সামসুল হক দুলাল (যুগ্ম সচিব, স্থানীয় সরকার), শেখ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ (সিনিয়র সহকারী জজ), সাইদুজ্জামান শরীফ (যুগ্ম জেলা জজ), জসিম উদ্দিন (এডি, সমাজসেবা), মনজুরুল হাসান (জিয়া মহিলা কলেজ), ইশতিয়াক উদ্দিন (ফেনী কলেজ), কামাল হোসেন (সমবায়), সোহরাব আল হোসাইন (ইউ এইচ, এফপিও), শেখ মোহাম্মদ উল্লাহ (এআরও), নাজমুল হোসেন চৌধুরী (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), আলাউদ্দিন চৌধুরী (সোনালী ব্যাংক), নিশাদুজ্জামান (এসিজিএম), ফুয়াদ হাসান (জেআরসি), গোলাম রহমান (উপজেলা শিক্ষা অফিসার), জহির উদ্দিন (ডিবি, সিএমপি), লে. কর্নেল নিলুফার সুলতানা, জাহিদুল ইসলাম (সহকারী প্রকৌশলী), আবু জাফর (ফেনী কলেজ), হাবিবুর রহমান (ফেনী কলেজ), মোস্তাক হোসেন (ফেনী কলেজ), আবু খায়ের ভূঁইয়া (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড), তামান্না আমিন (কর্মসংস্থান ব্যাংক), মোহাম্মদ হাসান (যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ), আবু ইউসুফ রাসেল (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়), আশরাফুল হায়দার চৌধুরী (সোনালী ব্যাংক), প্রমুখ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। আরও বেশ কয়েকজন তাদের ব্যস্ততার জন্য উপস্থিত থাকতে পারেনি। যেমন সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপ্টনের অন্যত্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। ফেনী ১ আসনের এমপির সহধর্মিনী সবার প্রিয় বিপদের বন্ধু প্রফেসর ডা. জাহানারা আরজু ও ফেনী ৩ আসনের এমপির সহধর্মিনী জেসমীন মাসুদ, ড. সালমা সিদ্দিকা অনুষ্ঠানস্থলের শোভাবর্ধন করেছেন। অনেকে ঈদ ও বিবিধ কারণে উপস্থিত থাকতে না পারলেও হোয়াটস্যাপের সাথে সংযুক্ত থেকেছেন, ভবিষ্যতে কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত থাকবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ফেনীর ইতিহাসে প্রথম এমন একটি আয়োজন উপস্থিত সকলকে আপ্লুত করেছে। অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি ছাপিয়ে যে বিষয়গুলো মূলত প্রাধান্য পেয়েছে সেটি এই নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।

আমাদের সকলের জানা, রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, বুদ্ধিজীবী, ইত্যাদি প্রভূত ক্ষেত্রে ১৯৪৭ এর পর থেকে ফেনী অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল। এমনকি বৃহত্তর নোয়াখালী অপেক্ষা এককভাবে ফেনীর ছিল গর্বিত অতীত ও ঐতিহ্য। ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ফেনীর ছিল অনন্য ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ না করলেই নয়, স্বাধীনতার সংগ্রামে দুই শহীদ বুদ্ধিজীবী সহোদরের বাড়িও ফেনী জেলা (সোনাগাজী উপজেলা): শহীদুল্লা কায়সার ও জহির রায়হান। স্বাধীনতার পরও কয়েক দশক ফেনী বেশ সমৃদ্ধ ছিল শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। এক সময় শোনা যেত দেশের অধিকাংশ জেলার ডিসি ছিলেন ফেনীর অধিবাসী; সচিবালয়ে অনেক সচিব, যুগ্ম সচিবের জেলা ফেনী। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সিনিয়র অধ্যাপকের জেলা ছিল ফেনী। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফেনীর সন্তানরা উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, পিএসসির চেয়রম্যান ফেনীর অধিবাসী ছিলেন। শিল্প-সাহিত্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফেনীর সন্তানরা। আজ ফেনীর সে সুদিন আর নেই। এখন ব্যবসায় প্রভূত অগ্রগতি হলেও, ফেনীতে উচ্চদালান কাঠামো বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম অপেক্ষা বেশি দেখা দিলেও শিক্ষায় পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা জেলার যে কোনো প্রত্যন্ত উপজেলা অপেক্ষা গোটা ফেনীর অবস্থা তুলনামূলক বিচারে খুব একটা ভালো নয়, বরং বলা যায় লজ্জাজনক।

গুটি কয়েক যারা ভালো করে একবার ফেনী ছাড়তে পারলেই যেন ফেনী বিমুখ হয়ে যায়। এর কারণ মাঝখানে ফেনীর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ও নিরাপত্তাহীনতা। এখন যদিও ফেনীতে সে দুরাবস্থা নেই বলে তিনজন সংসদ সদস্য আশ্বস্ত করেছেন। পরিস্থিতি যাই হোক, যেটি মূল বিবেচিত এই রকম গ্রুপ খুলে বা দুই ঈদে সম্মেলন করে কাজের কাজ কিছুই হবে না যদি না কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাই আগামী দুই/তিন বছরের জন্য কোনো এজেন্ডা নির্ধারণ করতে হবে। সবার বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে শিক্ষা হওয়া উচিত প্রথম বিবেচ্য। কারণ এটি দৃশ্যমান খাত যা ফেনীকে অনেক পিছনে নিয়ে এসেছে। এবং এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত যার মাধ্যমে অন্য সকলখাতকে ইতিবাচকভাবে স্পর্শ করে সকল খাতের প্রভূত উন্নয়ন সম্ভব। কেবল উচ্চশিক্ষা নয়, কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেও ফেনী অনেক পেছনে। সচিবালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমনি ফেনীর কর্মসংস্থান/অবস্থান দরকার, তেমনি দরকার দেশ-বিদেশে দক্ষতানির্ভর ফেনীবাসীর কর্মসংস্থান। তাই প্রয়োজন প্রতিটি উপজেলায় সত্যিকার অর্থে কার্যকর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন দক্ষতা, ভাষাজ্ঞান ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলে বিদেশে অভিবাসীদের আয় বহুগুন বৃদ্ধি পাবে।

ফেনীর জন্য বিশেষ টান, নাড়ির প্রতি বিশেষ স্নেহ-ভালোবাসা খারাপ কিছু নয়, আঞ্চলিক অর্থে নিছক কিছু নয়, বরং ফেনীর সমৃদ্ধির মাধ্যমে সারা দেশের কল্যাণ সূচিত করা সম্ভব। অন্য সব জেলা অপেক্ষা ফেনী যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে দেশ পিছিয়ে থাকবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়: "যারে তুমি নীচে ফেল সে, তোমারে বাঁধিবে যে নীচে; পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে"। তাই দেশের স্বার্থে, দেশপ্রেমের ব্রত নিয়েই দেশের জন্য এবং ফেনীর সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে, ফেনী পিছনে পদে থাকলে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। এটাই ছিল এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য।

ফেনী নোয়াখালী মানুষদের একটা বদনাম কাঁধে ভর করে, তা হলো তারা ইজম করে; অথচ এটি আজ মোটেও সত্য নয়। আন্তরিকতা থাকলেও, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফেনীর অনেক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত মানুষ, ব্যবসায়ী ফেনীর পরিচয় দিতে চান না। এই হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফেনীকে নিরাপদ করা গেলে এখন যারা ঢাকা বা চট্টগ্রামে স্থায়ী হয়েছেন তারাও ফেনীতে আশা-যাওয়া করবেন, নাড়ির প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন। আমরা গোটা দেশের। গোটা দেশের জন্য কাজ করবো, গোটা দেশের উন্নতি ও সুষম বিকাশের স্বার্থেই পিছু পড়া ফেনীতে বিশেষ যত্ন করতে হবে এটাই এখন প্রয়োজন। সুষম উন্নয়নের জন্য সুষম প্রতিযোগিতা দরকার, আর সেজন্য দরকার সুষম অবস্থান। ফেনীর অবস্থান আজ অনেক দুর্বল, বিশেষকরে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে। আমরা আজ যে যেই কর্মক্ষেত্রে রয়েছি আমাদের সংখ্যা কম বলে অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না, আমাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকসময় বঞ্চনার শিকার হতে হয়। এ জন্য অনেকে ফেনীর পরিচয় লুকিয়ে রাখতে চায়। সুতরাং শুধু নিজে নিজে উঠলেই হবে না, নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ করার জন্যও সম্মিলিতভাবে সবাইকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যাওয়া আবশ্যক। এই জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ ও প্রয়োজন দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সব অঞ্চলের মানুষ যদি নিজ নিজ অঞ্চল বা জেলার সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেন, দিনশেষে সেটা সামগ্রিক অর্থে দেশেরই উন্নতি- সব অঞ্চল মিলেই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

তিন জন সংসদ সদস্য ফেনীর জন্য এক হয়ে কাজ করতে চান; তাদের পাওয়ার কিছু নাই, তাদের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ফেনীর সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য যা যা কিছু করা দরকার তা তারা করবেন, সেজন্য তারা সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শও চেয়েছেন। তাদেরকে পরামর্শই দিয়ে হবে কখন কোথায় কোন কাজটি করা দরকার। অর্থাৎ তারা তাদের কাজের উপযুক্ত সময় ও সুযোগ সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তাদের অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। যে কোনো সময় তাদের ফোন করে ফেনীর জন্য কথা বলা যাবে, যোগাযোগ করা যাবে-ফেনীর জন্য তাদের দুয়ার খোলা।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বলেই নয়। আমরা যারা উপস্থিতি ছিলাম আমাদের একটা উপলব্ধি হচ্ছে যদি আলাউদ্দিন নাসিম ভাই হাল ধরেন, তিনি যদি চান, যেমনটা চাইবেন তেমন সমৃদ্ধ ফেনীই তিনি উপহার দিতে পারবেন। তিনি একজন সফল সংগঠক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রাণপুরুষ তিনি, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে শূন্য থেকে একটি এসোসিয়েশনকে দাঁড় করানো যায়। তিনি আজ ফেনীর অভিভাবক; বাকি দুই সংসদ সদস্য তাকে সম্মান করেন। ফেনীর সকল কর্মকর্তা তার অনুরাগী, তাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, তার নির্দেশ পালনে সবাই আন্তরিক। সুতরাং তিনি চাইলে সবাইকে কাজে লাগিয়ে ফেনীর হৃত গৌবর ফিরিয়ে আন্তে সক্ষম হবেন। তাই শুধু নয়, ফেনীকে ঈর্ষণীয় জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি পারবেন এটাই আমাদের আশা এবং প্রত্যাশা। আমরা ফেনীবাসী তার দিকে এবং তিন জন সংসদ সদস্যের দিকে তাকিয়ে আছি।

জেলা প্রশাসকের এখানে অনন্য ভূমিকা রয়েছে। অনুষ্ঠানের দিন অনুষ্ঠানের পূর্বে তাকে যেভাবে দেখেছি মনে হচ্ছিলো বোনের বাড়িতে ভাইরা বেড়াতে আসছে; তাই তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে টেবিল, চেয়ারসহ, খাবারের ব্যবস্থা সবকিছু দেখভাল করেছেন। তার পক্ষে সম্ভব ফেনীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা এবং সার্বিক কল্যাণ তদারকি করা। তিনি যেহেতু স্থানীয় প্রশাসক তিনি সকল অর্থেই ফেনীর কল্যাণে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন। আইনশৃঙ্খলাতো বটেই, শিক্ষাক্ষেত্রে সকল উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের হাট বাজারে তরুণরা যেন যেনতেনভাবে আড্ডা দিতে না পরে, শিক্ষার্থীরা যেন বাইরে অযথা সময় নষ্ট করতে না পরে, তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে মূল ভূমিকা পালন করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ, ছাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিধান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য এলাকার সচ্ছলদের নিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন, সকল স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা, সমাজে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, ইত্যাদি গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো খুব সহজ না হলেও, তিন সংসদ সদস্য যেহেতু আন্তরিক, তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাস্তবায়ন খুবই সম্ভব। পুরো ফেনীকে শিক্ষাবান্ধব জেলায় পরিণত করা জন্য তিনি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ও সাংবাদিকদের নিয়ে নিয়মিত সভা করে নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। তার যে পারিবারিক পরিচয় আমার জানা, তার মতো আন্তরিক ও নিবেদিত প্রশাসকের পক্ষে এটা মোটেও অসম্ভব নয়। অনুষ্ঠানস্থলে 'ফেনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা' শীর্ষক চমৎকার একটি মূল্যবান গ্রন্থ উপহার দিয়ে তিনি সবাইকে চমক দিয়ে সেটাই প্রমাণ করেছেন। এটাই ছিল আমাদের কাছে এই ঈদের শ্রেষ্ঠ উপহার। ফেনীকে শিক্ষাবান্ধব ও সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করতে তিনি তার দক্ষতা ও সক্ষমতার পরিচয় দেবেন, এটি আমাদের প্রত্যাশা।

পরিশেষে একটি নিবেদন! আমি চট্টগ্রাম জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যকরী সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি (আওয়ামীলীগ সমর্থিত দলের মনোনয়নে নির্বাচিত), তথাপি আমি প্রত্যাশা করবো, আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপটি সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত থাকুক। এই গ্রুপটি কেবলমাত্র ফেনীর জনগণের কল্যাণ, ও সমৃদ্ধির জন্য নিবেদিত থাকবে। এটাই হোক আমাদের নাড়ির প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

লেখক:
অধ্যাপক (গ্রেড ২), ও প্রাক্তন সভাপতি, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রামস্থ ফেনী সমিতির আজীবন সদস্য ও কার্যকরী কমিটির নির্বাহী সদস্য।
ইমেইল: [email protected]

মোবাইল/হোয়াটস্যাপ: ০১৮১৯১৭১১০৬