মুজিববর্ষে সারাদেশে ৬৬১৮৯টি পরিবারকে দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা একক ঘর ও ৩৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে ঘর প্রদান শুভ উদ্বোধন করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে ফেনী জেলার ৪টি উপজেলার মোট ১২৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১২৫টি গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে কবুলিয়ত দলিল, নামজারি খতিয়ান, ডিসিআর ও ঘর প্রদানের সনদ হস্তান্তর করা হয়েছে। ফেনীর সদর উপজেলার ধর্মপুর মৌজায় ৩৫টি, ফরহাদনগর মৌজায় ০৫টি মোট ৪০টি; সোনাগাজী উপজেলার আউরারখিল মৌজায় ০৪টি, দক্ষিণ সাহাপুর মৌজায়-১৯টি ও উত্তর চরসাহাভিকারী মৌজায় ১২টি করে মোট ৩৫টি; দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর নারায়নপুর মৌজায় ১৫টি, মমারিজপুর মৌজায় ০৬টি, পশ্চিম রামচন্দ্রপুর মৌজায় ৪টি ও প্রতাপপুর মৌজায় ০৫টি করে মোট ৩০টি এবং ফুলগাজী উপজেলার ভবনী চক বস্তা মৌজায় ১১টি পূর্ব বসিকপুর মৌজায় ০৯টি করে মোট ২০টি।
এছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ কর্মসূচির আওতায় এ জেলাধীন সদর উপজেলায়-১৪টি, সোনাগাজী উপজেলায়-৩১টি, দাগনভূঞা উপজেলা-০৩টি, পরশুরাম উপজেলা-০৯টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ১২টিসহ সর্বমোট ৬৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
উল্লেখ করার মত বিষয় হল এসকল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এক লক্ষ একাত্তর হাজার টাকায় যা অনুরূপ অন্যান্য প্রকল্পের বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক। সরকারি খাস জমি উদ্ধার, ঘর নির্মাণের উপযোগী করা, করোনার মাঝে দাপ্তরিক সকল কাজের মাঝেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী অতি অল্পসময়ে গুণগত মান বজায় রেখে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্যারগণসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে তা প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটিতে রাত ১২টার সময় স্টাফদের বাসা থেকে অফিস খুলে রিপোর্ট/তালিকা পাঠানোর মত ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া প্রতিদিন ২/৩টি করে ফলোআপ রিপোর্ট, নিয়মিত জুম মিটিং তো ছিলই!
ভূমিহীন ও গৃহহীন নিঃস্ব দরিদ্র মানুষ যাদের কিছুই ছিল না মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এ উদ্যোগে তাদের জীবন বদলে গেছে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের সেই গল্পের মতই। প্রত্যেকেই গ্রোথ সেন্টারের কাছাকাছি (হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, স্কুল কলেজের কাছাকাছি বা যোগাযোগের সুবিধা আছে এমন স্থান) মূল্যবান ২ শতাংশ খাস জমিসহ ২ কক্ষ, বারান্দা, রান্নাঘর, ওয়াশব্লকসহ রঙিন টিনের এ ঘরগুলো আর্থিক মূল্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হতে পারে। কিছু দিন আগেও চাল চুলোহীন ঠিকানাবিহীন এসব মানুষ তাদের একটু স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন। এ থেকে কমপক্ষে ৩ লক্ষ মানুষ এবং তাদের বংশধরগণ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
বিশ্বের ইতিহাসে এটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আরও ১ লক্ষ লোক শীঘ্রই ঘর পাবেন। বেদে, হিজরা, দলিত বা হরিজন শ্রেণি, চা শ্রমিকদের জন্য ঘর/ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন এবং ভূমিধসে বাড়িঘর হারিয়েছেন এমন ৪৪০৯ দরিদ্র পরিবারকে কক্সবাজারের খুরুশকুলে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সর্বপ্রথম জাতির পিতাই দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা) চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে যান এবং ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ প্রদান করেন।
এর সূত্র ধরে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ এ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে মুজিববর্ষের মধ্যে সকল গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে সরকার। সরকারের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এ দেশকে জাতির পিতার সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে প্রশাসন পরিবার সকলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবে।
জয়তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
জয়তু প্রশাসন পরিবার।
লেখক: রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (ভারপ্রাপ্ত), ফেনী।