১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন হয়ে আসছে। নিরাপদ রক্ত-এ থিম নিয়ে ২০০০ সালে পালিত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এ দিবস পালনের তাগিদ দিয়ে আসছে।
১৪জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব রক্তদান দিবসের তাৎপর্যঃ কার্ল ল্যান্ডসটেইনার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক। তাঁর জন্মদিন ছিল ১৪ জুন। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০০ সালে মতান্তরে ১৯০১ সালে ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কার করেন। তার আগে রক্তদানের প্রক্রিয়াটি একদমই সহজ ছিল না। উনি ১৯৩০ সালে এ,বি,ও,এবি ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ পান। তাঁর জন্মদিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর রক্তদাতা দিবস পালন করা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশেই স্বেচ্ছায় রক্তদান ১০০ ভাগ। আর আমাদের দেশে মাএ ৩১ ভাগ। ডব্লিউএইচওর একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়। বাংলাদেশে বছরে আট লাখের মতো রক্তের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সাত লাখ ইউনিট সংগ্রহ হয় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। যে সংখ্যাটা সংগ্রহ হয় এর ৩১ ভাগ হলো স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে। আর বাকিটা রিপ্লেসমেন্ট ডোনারের মাধ্যমে আসে। তাই এখানো বছরে প্রায় এক লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি রয়ে যায়।
প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়, অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজেদের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর, আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করে রোগীদের। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করা। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্যে দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবন-সংশয়ী সংক্রমন, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশংকা খুবই কম।
এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের প্রতিপাদ্যঃ নিরাপদ রক্ত জীবন বাঁচায়। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বাড়ে। স্বেচ্ছায় রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। রক্তদানের ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রন বজায় রাখতে সহায়তা করে,যা হৃদরোগর ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি হ্রাস করে। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরে আয়রনের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে পারে, যা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। লিভার সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। রক্তদান করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি সুস্থ ব্যক্তির তিন মাস পর পর রক্তদান করা উচিত। একজন ব্যক্তির রক্তদান বাঁচিয়ে দেয় মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ।রক্তদান হোক স্বেচ্ছায় মানবতার কল্যাণে। রক্তদানের মাঝেই জেগে থাকুক মনুষ্যত্ব।