সমাজের অধিকাংশ নারীই অনেক ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতার অজুহাতে আবার কেউ নিরাপত্তার অজুহাতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেই স্বস্তি পান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। যারা বাঁধাকে ডিঙিয়ে আনন্দ পান। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে চান।


আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ দিনে আমরা এমন একজন নারীর গল্প বলবো যিনি স্বামীকে হারিয়ে দমে যান নি, বরং সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সব বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দৃঢ় মনোবল, সাহস, বুদ্ধি ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে নিজেই গড়েছেন নিজের জগত। হ্যাঁ, তিনি হলেন মহিনূর জাহান লাবনী। লাবনী ফেনীর একজন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। পাশাপাশি একজন সমাজসেবী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন তিনি।


লাবনীর স্বামী ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল রকিব কাজমী ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তার মৃত্যুর পর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব আবদুল কুদ্দুস লিমিটেডের পরিচালনা দায়িত্বভার তুলে নেনে নিজের কাঁধে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মেয়ে ও এক ছেলের জননী।


আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন দৈনিক ফেনীডটকমের। সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে নারীকে নিয়ে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ নারীর জায়গা থেকে জীবনকে কিভাবে দেখেন?


লাবনীঃ নারীর জায়গা থেকে জীবনকে মূল্যায়ন করি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে। নারীরা মমতাময়ী মা, স্নেহপরায়ন বোন, খালা, ফুফু, জেঠি, চাচী, ভাবী, নানী, দাদী, কন্যা প্রত্যেকটা সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্ত সম্পর্কের প্রতিটি নারী যদি সুস্থ থাকে, ভালো থাকে, পরিবার ভালো থাকে। নারীরা তার পরিবারের, পরিবারের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে চেষ্টার ক্রটি করে না। কিন্তু কতটুকু ভালো আছে, সুস্থ আছে খেয়াল রাখেনা অনেক নারী। তাই প্রত্যেক নারীকে প্রথমে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। নারী ছাড়া সংসার অসম্পূর্ণ, সব সংসার অচল।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা পরিচালনায় করতে কেমন লাগছে?


লাবনীঃ একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পেরে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছি। মাথা উঁচু করে বাঁচার মধ্যে থাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ, সক্রিয়তা প্রকাশের স্বাধীনতা, নিজস্বতা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অনুভব।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ দাপ্তরিক কাজ এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মী ব্যবস্থাপনায় নারী হিসেবে বাড়তি চাপ অনুভব করছেন কিনা?


লাবনীঃ দাপ্তরিক কাজ এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মী ব্যবস্থায় নারী হিসেবে মূল্যায়ন নয়, একজন মানুষ হিসেবে মুল্যায়িত নারী হিসেবে যেমন কোন বাড়তি সুযোগ নেই, তেমনি বাড়তি চাপও নেই।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে এগিয়ে যেতে কতটুকু সহায়ক বলে মনে করেন?


লাবনীঃ আমাদের সমাজ ব্যবস্থাপনায় নারীদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে এগিয়ে যেতে এখন তেমন একটা অসুবিধা নেই। এখন মানুষ যথেষ্ঠ শিক্ষিত এবং এই শিক্ষিত সমাজে ছেলেমেয়ের তফাৎ অনেক কমে গিয়েছে। প্রত্যেকটা সন্তানকে সন্তান হিসেবে মুল্যায়ন করা হয়। এখন অধিকাংশ অভিভাবক মনে করেন, ছেলেরা যা পারে মেয়েরাও তা পারবে। কোন ছেলে-মেয়ে আলাদা কাজ নয়।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ ব্যবসার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হতে নারী হিসেবে কতটা সহযোগিতা পেয়ে থাকেন?


লাবনীঃ ব্যবসার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নারী হিসেবে আলাদা কোন সহযোগিতা প্রদান করা হয় না।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ কর্মজীবনে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা কে যোগায়?


লাবনীঃ কর্মজীবনে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যোগায় আমার মা। যার অনুপ্রেরণায় আমরা আট ভাইবোনই পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছি।


দৈনিক ফেনীডটকমঃ উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?


লাবনীঃ উদ্যেক্তা হিসেবে নারীদের জন্য আমার পরামর্শ হল যার যার শিক্ষা এবং সামাজিক অবস্থান থেকে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করা এবং নিজেকে স্বনির্ভর করা। তাৎক্ষনিক বড় কিছু করা সম্ভব নয়। ছোট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় কর, যা টিকে থাকবে। আপন আলোয় আলোকিত হও এবং অন্যকে আলোকিত কর, সমাজকে আলোকিত কর।