ফরিদ আহমদ দুলাল
একা হতে দাও

অনিবার্য হতে দিও না আমায় তোমার কৃপায়
আশ্রয়ের নামে অবহেলায় করো না অসহায়!
ঘুমাতে দিও না আমায় নিশ্ছিদ্র আদরের ওমে
পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি যায় কমে,
একাকী জাগিয়ে রাখো নিরানন্দ রাত
বরাদ্দ দিও না আমায় কখনো কৃপার ‘বরাত’।
জলোচ্ছ্বাসে যদি ভেসে যাই দরিয়ায়
বাতিঘর হয়ে দেখিও না পথ বিপন্ন আমায়,
প্রবল ঢেউয়ের সাথে লড়ে একা বাঁচার সুযোগ দাও
মাথার উপর থেকে তোমার ছায়ার আশ্রয় সরিয়ে নাও।

বর্ণিল আলোয় তোমার উৎসব আলোকিত হোক
অমানিশার আঁধার আমার রাত্রিকে নিঃসঙ্গ করুক।
মদের গেলাস যদি শূন্য হয়ে যায় সাকি হয়ে তুমি কখনো এসো না
মাতালকে ভুলে কখনো ভালোবেসো না;
একা হতে দাও নিঃস্ব হয়ে যেনো মরি
চাঁদ হয়ে আমার আকাশে হইও না কখনো রূপোর তসতরি।

 


খোকন সাহা
অক্ষরের অভিশাপ

ও বর্ণমালা
তোর গর্ভে বেজে ওঠে
মুমুর্ষু ভাষার অব্যক্ত জলধারা
প্লাবন কথা নাই-বা দিলি
নাই-বা জীবনের জলসত্র
আমাদের কন্ঠরুদ্ধ পোশাকের পাঠশালায়।

তবু তোর দীঘল ঢেউয়ের পায়ে পায়ে
যত স্বর ব্যঞ্জনের বলয় মাথা কুটে মরে
সৃজন রক্তের আদ্যঘ্রাণ
ওলানচাঁদের উথলানো ধারা
দিবি-না তোর শব্দ সন্তান
দৈত্যের কারাগারে?

ও বর্ণ
তোর অন্ধ আতুর ঘরে
কে রাখিল
নিদ্রিত নৈবেদ্যের পরমান্ন!

 


শাহান সাহাবুদ্দিন
তোমাকে ঈর্ষা করেন সিলভিয়া প্লাথ, ভার্জিনিয়া ওলফ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো

কবিতা তুমি পড়, পড় তো!
বিনয় মজুমদার, রফিক আজাদ, আবুল হাসান ও নির্মলেন্দু গুণের কবিতা না-
তুমি পড় আমার কবিতা।
যতোটা না লিখেছি তারচে ঢের বেশি পড়েছো তুমি,
বিস্তর পড়েছো তুমি আমার কবিতা।
বস্তুত তুমি ট্রেনে ওঠো কম
কালেভদ্রে বিমানে
বাসে বা কারেই চাপো বেশি;
অথচ কী আশ্চর্য, তুমি কিন্তু বিকেলের কোনো দূরগামী ট্রেনের
জানালার পাশে বসে আমার কবিতাই পড়;
জানালার ওপাশে নদী-ধানক্ষেত-টেলিগ্রাফ তার-নেমে আসা আকাশ-এইসব তুমি দেখো, আর পড় আমার না লেখা কবিতা!
তুমি যখন আমার কবিতা পড়ছো, ধরে নিলাম পড়ারকালে ট্রেন এসে থেমেছে গৌরীপুর জংশনে;
জংশনে হকারের হল্লা, পকেটমার, সুন্দরী যুবতীপাগলী, গুটিকয়েক যুবকের চঞ্চলতা-এইসব দেখছো তুমি আর পড়ছো আমার না লেখা কবিতা; এমন সময় জানালার পাশে বসে থাকা তোমার কাছে হাত পাতলো বুড়োমতো এক ভিখেরি।
তাঁর সকরুণ চোখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে তুমি বলছো-এইযে চাচা শুনছেন, আপনি আমার কাছে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, ততোটা কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান নন!
এইযে তুমি দেখাতে পারলে অহম আর ঔদ্ধত্যের সুন্দরের প্রকাশ, এটা তুমি রপ্ত করেছো পড়ে আমার কবিতা-
যা লেখা হয়েছে তাও
যা লেখা হয়নি তাও!
যে ট্রেনে বসে তুমি পড়ছো আমার কবিতা
মজার বিষয় হলো সে ট্রেন এখনো আসে নি
হয়তো বা আসবে
আসতে থাকবে অনন্তকাল ধরে
অথবা আসবেই না কোনোদিন;
অথচ আমাদের কথোপকথনে যে ট্রেনের দেখা মেলে, তা তো রোজ সকাল বিকাল ও মধ্যরাতে দাঁড়ায় এসে আমাদের কুঞ্জবনষ্টেশনে;
কখনো কখনো বৃন্দাবনজংশনে;
এই দুইয়ের স্টেশনমাষ্টারকেও তুমি খুব পছন্দ করো
কেনো না তোমার কবিকে তারা ভালোবাসেন, ভালোবেসে বিনিপয়সায় ট্রেনের টিকিটে কবিতা লিখতে দেন;
যে কবিতার দুর্লভ অক্ষর, উপমা, চিত্রকল্প, সুখ-অসুখ তুমি ছাড়া আর কেউ উদ্ধার করতে পারেনা, পারবেও না কোনোদিন!
আমি প্রায়ই কবিতা লিখি না
অথচ রোজই লিখি;
কেনো না, আমার না লেখা কবিতা তোমার পড়া হয়ে যায়
তুমি সিন্ধুর আকাশ, ট্রয়ের আকাশ ও সুমেরীয় আকাশ দেখতে দেখতে
সেইসব আকাশে তোমার ঘন অন্ধকার চুলের সুবিন্যস্ত বিন্যাস ছড়িয়ে দিয়ে আমার কবিতাই পড়, না লেখা কবিতা;
এইসব কবিতা পড়তে পড়তে তুমি একসময় কবিতার কবিকেই পড়ে ফেলো।
সেন্স অব ট্র্যাজেডি হচ্ছে, আমাকে ও আমার কবিতা পড়ার পর তুমি কখনো বিদুষী হয়ে ওঠোনা;
বরং তুমি যা হয়ে ওঠো তাকে কখনো কখনো ঈর্ষা করেন সিলভিয়া প্লাথ, ভার্জিনিয়া ওলফ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো;

হায়, তারা কখনো না পড়েছেন আমাকে, না আমার কবিতা!

 


সোমেন চক্রবর্তী
প্রেমিকার চিঠি

বরফঢাকা পাহাড়ের কোল ঘেঁষা আমার ব্যারাক
এখানে মৃত্যু ও আমি একে অপরকে কুর্ণিশ করলে ভোর হয়

যতটা শীতল বাতাস ততটা উষ্ণ ইচ্ছা
তবেই বুকের ভিতর গুলমার্গ ভাসে।

ক্লান্ত রাইফেলটাকে শুইয়ে দিয়ে আগুনের সাথে সখ্যতা শিখছি
সিন্দুকের ভিতর তখন নেড়েচেড়ে ওঠে সঞ্চিত ওম

আমার প্রেমিকা দূরে কোথাও
কাগজে হয়তো লিখছে মনবাউলের চিঠি
সে চিঠি পড়বো বলে গ্লাসে ঢেলে নিই নিজেকে

পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে নেমে আসা প্রতিটি মেয়েই ডাকপিয়ন
নিয়ে আসে প্রেমিকার খবর
গ্লাসের বুদবুদ মুছে যাবার আগেই পড়ে নিই তার যাবতীয় লীনতাপ।

 


আব্দুল আলীম
নাগরিকতা

আমাদের মসজিদ কেড়ে নিয়েছো
আমরা কিছুই বলিনি।

আমাদের ভাইবোনদের পুড়িয়ে মেরেছো
ভ্রƒণজ শিশুদের হত্যা করেছো
আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি।

আমাদের ইতিহাস
বহু অধিকার মাটিতে পুঁতে রেখেছো
আমরা না দেখার ভান করেছি।

সব ভুলে গিয়ে আমরা ভালোবেসেছি
এই দেশ, এই মাটি ও মানুষ
তারপরও এই উদাম বুকে
আগুন ধরাতে চাইছো?
উপড়ে ফেলতে চাইছো সব!

মনে রেখো বন্ধু
আগুনের হাত নেই পা নেই
তবুও আগুন হাঁটতে পারে
ছুটতে পারে
এবং উড়তে পারে।

 

লেখক ও পাঠক

প্রিয় লেখক ও পাঠক, আপনিও লিখুন আমাদের এই সাহিত্য সাইটে। আপনার অনুগল্প, কবিতা, গদ্য, ভ্রমণ ও সাহিত্যবিষয়ক নিজের লেখাটি আমাদের কাছে মেইল করুন।
আমাদের প্রথম শব্দ বিস্ময়, আমাদের দ্বিতীয় শব্দ সাফল্য, আমরা এক দুই তিন গুনে গুনে পৃথিবীকে জানান দিবো আমাদের সৃষ্টির কথা। তাই আপনার হাতে ক্লিক করা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তোলা আপনার নামসহ প্রাসঙ্গিক ছবিটি আমাদের মেইল করুন। আমরা প্রকাশ করতে চাই আপনার সৃষ্টিকে।

 

আলমগীর মাসুদ

সাহিত্য সম্পাদক

দৈনিক ফেনী.কম

[email protected]

+88 01818495615