পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে নির্মাণের পর থেকেই বন্ধ হয়ে আছে প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইনে স্টেশন। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি প্রায় ১০ বছর ধরে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত প্রাণী, প্রাণিজাত পণ্য ও প্রাণীর খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি প্রদানে বিলোনিয়া স্থল বন্দরের জিরো পয়েন্টে ২০১৬ সালে ১৫ শতক জায়গায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি নির্মাণ করে। উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে স্টেশনটি। ব্যবহার হয়নি কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের কোনো যন্ত্রপাতি। ফলে কোনো কাজেই আসছে না কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ স্থাপনাটি।
২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালুর পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। তবে যে লক্ষ্যে স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। গত ১৬ বছরে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পণ্য আসেনি। বর্তমানে আমদানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকে আসা পশুপাখি ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে প্রাণী ও মানুষের দেহে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে বিলোনিয়া স্থলবন্দরে এই কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। স্টেশনটিতে কার্যক্রম না থাকায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। প্রাণীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্টেশনটিতে সরবরাহ করা হয় ৫১টি যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে অনেকগুলো যন্ত্রপাতির প্যাকেট খুলে রাখা হয়েছে। দশ বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় এগুলোতে জমে রয়েছে ধুলোবালি, নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেখভালের জন্য রয়েছেন শুধু একজন আউটসোর্সিং নিরাপত্তা প্রহরী। নির্মাণের পর ষ্টেশনটির জন্য ক্রয় করা হয়েছে- ল্যাব ইনকিউবেটর, ওয়েট মেশিন, ডিজেল জেনারেটর, কলোনি কাউন্টার, ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, পোস্টমর্টেম সেট, বৈদ্যুতিক স্ট্যাবিলাইজার, ওয়াটার হিটার, থার্মো ফ্লাস্ক, ডিজিটাল ক্যামেরা, কম্পিউটার, কর্মকর্তার জন্য খাট, আলনা, আলমারিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এছাড়া অ্যানিমেল শেডটিও অলস অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শেডের ভেতরে পড়ে থাকা শিকল ও খাঁচায় জং ধরেছে। শেডের কক্ষগুলোও অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয়রা বলেন, পরশুরাম উপজেলার তিনদিকে ভারতের সীমান্ত থাকায় চোরাপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আনা হয়। বৈধভাবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে পশু আমদানির সুযোগ রয়েছে। বৈধভাবে গরু আমদানি হলে সীমান্তে গরু চোরাচালান বন্ধ হবে। সেই লক্ষ্যে কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবে নামে মাত্র টিকে আছে বিলোনিয়া স্থলবন্দর।
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক মিজানুর রহমান পারভেজ বলেন, প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি নির্মাণের পর থেকে এটির কোন কার্যক্রম নেই। কোটি টাকা খরচ করে সরকার একটি ভবন করে রেখেছে, যেটি কোনো কাজে আসছে না। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। মাছসহ কাঁচা পণ্য রপ্তানিতে কোয়ারেন্টাইন সনদ প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিলোনিয়া স্থলবন্দরে সেই ব্যবস্থা নেই, যেটি প্রয়োজন সরকার সেটা করেনি।
পরশুরাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হরিকমল মজুমদার জানান, বিদেশ থেকে আসা পশুপাখি ও প্রাণিজ খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত ওষুধ সামগ্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোয়ারেন্টাইন স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। স্টেশনে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি রয়েছে। স্টেশনে স্থাপিত ল্যাবরেটরি ও কোয়ারেন্টাইন শেডে প্রাণী ও প্রাণিজ খাদ্য ২৪ ঘণ্টা রেখে পর্যবেক্ষণের পর ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিতে এটি নির্মাণ করা হয়। কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের কার্যক্রম চালু হলে গরু, ছাগলসহ গবাদি পশু স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
