ঐতিহ্যবাহী বিলোনিয়া রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে ইট লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এতে বিলীনের মুখে পড়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বিলোনিয়ার রেল স্টেশন।
সরেজমিনে জানা গেছে, বিলোনিয়া সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মজুমদার হাট ক্যাম্পের পাশে বিলোনিয়া রেল স্টেশনের স্টাফ রুম ও স্টোর রুমসহ কয়েকটি ভবনের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায় একমাস ধরে এসব কক্ষের দেয়াল ভেঙে ইট লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
এদিকে গত ২ অক্টোবর বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনের পশ্চিমে পরশুরাম পৌরসভার অর্থায়নে পাবলিক টয়লেট নির্মাণসামগ্রী ও ইট চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি অটোরিকশাসহ ৩ জনকে আটক করে বিজিবি। স্থানীয়দের অনুরোধে আটককৃত উত্তর বাউরখুমা তালুকপাড়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (২২), আবদুল মান্নানের ছেলে মোঃ শুভ (১৮) ও তাজু মিয়ার ছেলে মো. আল আমিনকে (১৮) মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রেলওয়ে স্টেশনের এসব ভবন ভাঙা ও লুটপাটের সাথে বিলোনিয়ার ৫-৬ জনের একটি চক্র জড়িত রয়েছে। এরা অধিকাংশ মাদকাসক্ত বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ সরকার ফেনী বিলোনিয়া রেলপথে রেল চালু করে। ফেনী চট্টগ্রাম ও ঢাকা যাতায়াতে বিলোনিয়ার রেলগাড়ি ফেনীর উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে হয়ে ওঠে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আশার আলো। ১৯৯৬ সালের লোকসানের অজুহাতে হঠাৎ করে বন্ধ দেয়া করে দেওয়া হয় বিলোনিয়ার রেলগাড়ি। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত রেলওয়ের আটটি স্টেশন পরিণত হয় ভুতুড়ে ঘরে। রেললাইন ও স্টেশনের বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিলোনিয়া রণাঙ্গনের ইতিহাস এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর কোরে পড়ানো হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর ছোড়া অসংখ্য বুলেট রুখে দেয় রেল স্টেশনের ভবনগুলো। বিলোনিয়া রেল স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে এখনো লেগে আছে সেসব গুলির চিহ্ন। অমীমাংসিত মুহুরীর চরের বিরোধে ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ৫৮ বার গুলিবিনিময় হয়। তখন ভারতীয় বিএসএফের গুলির সামনে বিলোনিয়ার রেল স্টেশনের ভবনগুলো রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিজিবির মজুমদার বিওপির কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো শাহজাহান জানান, সীমান্তে নজরদারি জোরদার করায় মাদকপাচার বন্ধ রয়েছে। মাদক বন্ধ থাকায় মাদকসেবীরা এসব চুরির সাথে জড়িত রয়েছে।
বিলোনিয়ার রেল স্টেশনের ভবন ভেঙে ইট চুরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বিলোনিয়ার নুরুল ইসলাম জানান, বিলোনিয়ার রেল স্টেশরে ভবনগুলো প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করছে। এগুলো ভেঙে লুট করে নিয়ে যাওয়া হলে ইতিহাস ধ্বংস করা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের লাকসাম (জিআরপি) থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর এসব দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের নয়। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ফেনী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুজন ব্যানার্জী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি আরেক প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেনকে ফোন ধরিয়ে দেন। প্রথমে তিনি বিলোনিয়ায় রেলওয়ের কোন ধরনের ভবন বা স্টেশন নেই দাবি করেন। পরবর্তীতে প্রতিবেদক তাকে বিলোনিয়ার রেলওয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্টেশন ও ভবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।