পরশুরামে সাম্প্রতিক বন্যায় ৫০০টি গভীর-অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি নেমে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সেগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এসব নলকূপ নষ্ট হওয়ায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভায় গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে ৩০১৮টি। এর মধ্যে গভীর নলকূপ ১২৪৩টি, অগভীর নলকূপ ১২৬০টি, সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ ৪০৮ টি, রিংওয়েল ১১টি ও তারা গভীর নলকূপ ১৬১টি। এসব নলকূপের মধ্যে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গভীর নলকূপ ৬৫টি, অগভীর নলকূপ ৯৪ টি ও ৫টি রিংওয়েল নষ্ট অবস্থায় ছিল।

গত ২০ আগস্টে শুরু হওয়া বন্যায় পরশুরামের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার পানি বিভিন্ন গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী ছিল। ফলে গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম গভীর ও অগভীর নলকূপে কাঁদামাটি ঢুকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়।

চিথলিয়া ইউনিয়নের নোয়াপুর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের পারুল আক্তার জানান, বন্যার পানি কমার পর টিউবওয়েলে চাপ দিলে কাঁদা বের হচ্ছে। এখনো পানি পান করতে পারছি না। পাশের বাড়ি থেকে পানি এনে খাওয়া ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করছি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের তথ্যানুযায়ী, এবারের বন্যার কারণে প্রায় ৬০০টি গভীর ও অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে কাঁদামাটি ও ময়লা ঢুকে ব্লক হয়ে গেছে। কিছু নলকূপ থেকে পানি বের হলেও ময়লা ও বালু থাকায় এসব পানি পানযোগ্য নয়। এগুলো থেকে পানি উঠছে না। বন্যার পানি কমার পর ১০০ নলকূপ মেরামত করে পানি তোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস।

পশ্চিম অলকা গ্রামের জরিনা আক্তার জানান, বন্যার পর থেকে আমাদের বাড়ির নলকূপটি থেকে পানি উঠছিল না। সরকারিভাবে লোক এসে সেটি ঠিক করে পানি জীবানুমুক্ত করে দিয়েছে।

জানা গেছে, এখনো ৫০০ গভীর ও অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে আছে। এগুলোর মধ্যে গভীর নলকূপ রয়েছে ২০০টি ও অগভীর নলকূপ রয়েছে ৩০০টি। এছাড়া ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০টি ওয়াশব্লক নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া নলকূপ ও ওয়াশব্লক মেরামতের জন্য ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী উত্তম কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, বন্যার পর ১০০টি নলকূপ মেরামত করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য প্রায় ১০০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপন করেছি। আমাদের লোকবল কম রয়েছে। অকেজো নলকূপ, ওয়াশ ব্লক মেরামত, অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপনের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।