ফখরের নেছা (৫০)। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ছিল সুখের সংসার। ৮ শতক জমিতে ছিল সাজানো বসতভিটা। কিন্তু বন্যার পানিতে ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে সেই বসতভিটার ঘর ও জমি। সিলোনিয়া নদীতে ভেসে গেছে তাঁর স্বপ্ন। এখন ব্রিজের উপর ঝুপড়ি তৈরি করে স্বামী, সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ফখরের নেছা।
জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ জঙ্গলঘোনা গ্রামে বয়ে গেছে সিলোনিয়া নদী। নদীর মাঝে সিলোনিয়া ব্রীজ। ব্রীজের পূর্ব পাশে ছিল ফখরের নেছার বসত ঘর। স্বামী ননা মিয়া অসুস্থ। ৫ মেয়ের মধ্যে ৪ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে ফেনী শহরের একটি হোটেলে বয়ের কাজ করেন। নদীর পাশে ৮ শতক জমিতে ফখরের নেছার বসতঘর ছিল। গত ২০ আগস্টে শুরু হওয়া ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় ৫’শ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারায়। সেই বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ফখরের নেছার ঘর, আসবাবপত্রসহ সবকিছু। নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটার জায়গা ভেঙ্গে পড়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বসতভিটার জায়গা। এখানে যে একটি পরিবারের বসবাস ছিল, দেখে সেটিও বুঝার উপায় নেই।
ফখরের নেছা জানান, ২০ আগস্ট রাতে ঘরে পানি বাড়তে শুরু করে। রাতে ঘরের চালা পর্যন্ত পানি উঠে যায়। কোনো মতে মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সিলোনিয়া ব্রীজের উপর উঠে জীবন বাঁচাই। ব্রীজের পিলারের কারণে বন্যার স্রোতের সাথে ভেসে যেতে না পেরে কিছু টিন আটকে ছিল। পরের দিন ব্রীজের উপর একটি ঝুপড়ি বানিয়ে সেখানে থাকছি। খোলা আকাশের নিচে রান্না করে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। শৌচকার্য করার জায়গা নেই। অবিবাহিত মেয়েকে অন্যের বাড়িতে রেখেছি। গত ২০ দিন ধরে ব্রীজের উপর ঝুপড়ি ঘরে থাকলেও কোন সাহায্য পাইনি। এখন কার কাছে যাব? কোথায় থাকব?
তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কোন টাকা পয়সা নাই। ঘর করার জন্য সরকার বা কেউ টাকা দিলে ঘর তৈরি করতে পারব।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, বন্যায় বহু মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সেখান থেকে নির্দেশনা বা সহযোগিতা এলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।