দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ স্থাপনায় জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। চিকিৎসক, নার্স ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে এ হাসপাতালে মোট ৭৭টি পদ শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়েছে হাসপাতালের আল্ট্রা মেশিনসহ অপারেশন থিয়েটারের নানা সরঞ্জাম। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধও। অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল স্থাপনা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
হাসপাতালে সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ১৮ জন কাজ করছেন। এদের মাঝে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্টের স্থলে রয়েছেন মাত্র ৫ জন। তাদের মাঝে একজন মেডিকেল অফিসার ও ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী ও মেডিসিন) কাগজে-কলমে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকলেও মূলত তাদের একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও দুইজন ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোর মাঝে গাইনি, চক্ষু, অর্থোঃ, ইএনটি এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। চিকিৎসকের পাশাপাশি ১৭ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াফারি, ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৩ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ২২ জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও আয়া, ওয়ার্ড বয়, বাবুর্চি, নিরাপত্তা প্রহরী, বাগান মালী, ওটি বয় ও পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ এ হাসপাতালে ১৯ জন চতুর্থ শ্রেনীর জনবল সংকট রয়েছে।
অন্যদিকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে ও ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না ওষুধও। প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য জনবলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
চিকিৎসক সংকটে বহির্বিভাগে প্রতিদিন একজন চিকিৎসক ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানান জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ডাঃ সৈয়দা মেহজাবীন তাহের। তিনি দৈনিক জানান, আউটডোর রোগীর চাপে সকাল থেকে ডিউটি শেষ হওয়া পর্যন্ত সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ মেলে না। এছাড়াও হাসপাতালে রোগীর তুলনায় ডায়বেটিস ও প্রেশারের ঔষধসহ প্রয়োজনী ঔষধের সরবরাহ কম।
এছাড়াও ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন সকল স্থাপনা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্টাফ ও সেবা গ্রহীতারা। স্টাফ কোয়ার্টার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় থাকছে না অধিকাংশ চিকিৎসক ও স্টাফ। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দ্রুত হাসপাতালটির পুরাতন সকল স্থাপনা, ল্যাব ও স্টাফ কোয়ার্টার সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী নুর হোসেন মজুমদার জানান, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই। এছাড়াও সামান্য কোন সমস্যা নিয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসকরা অন্যত্র রেফার করে। সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ গর্ভবতী নারীকে ভর্তি রাখে না। জটিল রোগের কোন ঔষধ মানুষকে দেওয়া হয়না।
চিকিৎসক ও স্টাফ সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের জানান, জনবল সংকটের মাঝেও আমরা সকল কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। তিনি জানান, হাসপাতালের কর্মকর্তার জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও নেই ড্রাইভার। গত জুলাই মাস থেকে গাড়ির তেলের জন্য কোন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের কোয়ার্টার ও স্থাপনাগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে ফেনীর সিভিল সার্জন ডাঃ শিহাব উদ্দিন রানা দৈনিক ফেনীকে জানান, ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সসহ জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি এবং দ্রুত এ সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবকাঠামো সংস্কারের বিষয়ে তিনি জানান, এ বিষয় হাসপাতালের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাদের লিখিতভাবে অবহিত করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।