ফেনীতে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করছে পরশুরামের আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ।


উচ্চ শিক্ষার প্রসারে জেলার সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে স্থাপিত হয় এ কলেজটি। একই বছর বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ৮২জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম।


২০১৯ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম বছরেই শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে। এর মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে জিপিএ-৫ অর্জন করে।


কলেজ সূত্রে জানা গেছে, পাশকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২জন সরকারি মেডিকেল কলেজে ও ৩জন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে কলেজের থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে পাশ করা হাবিবুল বাশার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ফারহানা আক্তার নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। অন্যদের মধ্যে মফিজুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাহমিনা সুলতানা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যয়ন করছে।


কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার জানায়, মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পেছনে আমার কলেজের শিক্ষকদের পাঠদান ও আন্তরিকতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করলেও কলেজ হতে যে তদারকি করা হয়েছে, তাদের প্রচেষ্টা ও আমার পরিশ্রমে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছি।


হাবিবুলের বাবা জানান, কলেজের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকার কারণেই আমার ছেলে বাশার এমন একটি সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।


কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কলেজে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০২ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। ৩০ একর জায়গার উপর স্থাপিত ২ তলা বিশিষ্ট কলেজটির ২২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। কলেজে বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে চারজন, ব্যবসায় বিভাগে চারজন, মানবিক বিভাগে চারজন এবং বাংলা, ইংরেজি ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে তিনজন শিক্ষক পাঠদান করছেন। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী ও নৈশ প্রহরীসহ ১২জন কর্মচারী বিভিন্ন শাখায় কর্মরত আছে। বর্তমানে কলেজের ৩য় তলার সম্প্রসারণের কাজ চলছে।


২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষে মানবিক বিভাগে ২৯ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ২৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮২ জন ভর্তি হয়েছিল। পরবর্তীতে নির্বাচনী পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হয়ে মানবিক বিভাগ থেকে ৯ জন, বিজ্ঞান বিভাগ হতে ২১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩৮ জনসহ মোট ৬৮জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।


২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মানবিক বিভাগ হতে ৩৫ জন, বিজ্ঞান বিভাগ হতে ২৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা হতে ৭১ জনসহ মোট ১২৯ জন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মানবিকে ১২৯ জন, বিজ্ঞানে ৪৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১১১ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে।


জেলায় গুণগত শিক্ষার প্রসারে কলেজটি স্থাপন করেন ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও অর্থায়নে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।


কলেজের অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, গভর্নিং বোর্ডের তদারকি, দক্ষ পরিচালনা, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পরিশ্রম আর আন্তরিকতার ফলে আমরা এই সাফল্য পাচ্ছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য আমরা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রমেরও ব্যবস্থা রেখেছি।


তিনি আরও জানান, বর্তমানে কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, বিতর্ক ক্লাব, সংগীত ক্লাব এবং ইনডোর-আউটডোর গেমস ক্লাব রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।
অধ্যক্ষ বলেন, কলেজে শীঘ্রই অনার্স কোর্স চালু করা হবে। কোর্স চালুর ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেলেই আমরা কলেজে অনার্স কোর্স চালু করব।


আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পরশুরাম পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, কলেজটিতে বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব শ্রেণিকক্ষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যোগ্যতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে।


তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে প্রতিদিন ৬টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। তাছাড়া অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসব পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তী অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে অবহিত করা হয়।


পৌর মেয়র বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে নির্বাচনী পরীক্ষা শতভাগ কৃতকার্যদেরই শুধু আমরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করি। এছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রীসহ বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করে আসছি। কলেজের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ছবিঃ ইন্টারনেট