দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের বিরতির পর সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও আবার শুরু হয়েছে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে জেলাজুড়ে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

দীর্ঘদিন পর জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সন্তোষ প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে। তারা জানান, দীর্ঘ বিরতির পর এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষার কাঠামো ও প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিতে পারবে। পাশাপাশি এ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ আরও সুসংহত ও ত্বরান্বিত হবে।

মাসুদুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে আজ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের পরীক্ষা চালু হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলতে সরকারকে এ পরীক্ষা নিয়মিতভাবে চালু রাখা উচিত।

রাশেদ মাহমুদ আরেক অভিভাবক বলেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষার পরিবেশ ও প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। আমরা আশক করব আগামী নির্বাচনে যে সরকারই আসুক এ ধরনের পরীক্ষা যেন চালু রাখে।

ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে ভালো ফল করতে সহায়তা করবে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় ইবতেদায়ি ৫ম, দাখিল ৮ম ও স্কুল পর্যায়ে ৮ম শ্রেণির এ পরীক্ষা মোট ১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রোববার থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষা আগামী ৪দিন অনুষ্ঠিত হবে। সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলায় ইবতেদায়ি ৫ম, দাখিল ৮ম ও স্কুল পর্যায়ে ৮ম শ্রেণির থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। সূচি অনুযায়ী, রোববার বাংলা (বিষয় কোড ১০১), ২৯ ডিসেম্বর সোমবার ইংরেজি (১০৭), ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গণিত (১০৯) এবং ৩১ ডিসেম্বর বুধবার বিজ্ঞান (১২৭) ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (১৫০) বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথকভাবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট করে। ফলে ওই দিন মোট তিন ঘণ্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার সব প্রশ্ন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জানা গেছে, জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মোট পাঁচটি বিষয়ে মূল্যায়ন করা হবে। বিষয়গুলো হলো— বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ১০০ নম্বর করে এবং বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৫০ নম্বর করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে মোট ৪০০ নম্বরের ওপর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ দৈনিক ফেনীকে বলেন, জেলাজুড়ে মোট ১২টি কেন্দ্রে মাদ্রাসা পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণির ইবতেদায়ি, অষ্টম শ্রেণির দাখিল এবং স্কুল পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জানান, আজকের পরীক্ষাটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দিনগুলোর পরীক্ষাও যেন সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছিল সরকার। এরপর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হয়েছিল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে একই সিলেবাসের আদলে অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষার নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছরও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। নেওয়া হয়নি বৃত্তি পরীক্ষাও। এবার এ বছর থেকে দীর্ঘসময় পর অষ্টম শ্রেণিতে ফের চালু হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা।

অংশ নেয়নি ৪শ পরীক্ষার্থী
সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ফেনীর ৬ উপজেলা জুড়ে মোট ১২টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলাজুড়ে মোট ৬ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দিনে ৪৫১ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। এতে প্রথম দিনে অংশ নিয়েছে ৫ হাজার ৯৬৮ জন শিক্ষার্থী।

একই দপ্তরের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মাদ্রাসা পর্যায়ে দাখিল ৮ম শ্রেণিতে মোট ১ হাজার ৭৯ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ৯৬৮ জন অংশ নিয়েছে। ইবতেদায়ি ৫ম শ্রেণি পর্যায়ে মোট ১ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও ১ হাজার ৬৪২ জন পরীক্ষা দিয়েছে। স্কুল পর্যায়ে ৮ম শ্রেণিতে মোট ৩ হাজার ৫৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৩৫৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।