দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের বিরতির পর আবারও শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের আয়োজন হিসেবে ফিরে এসেছে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সারাদেশের ন্যায় একযোগে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় ফেনী জেলা থেকে মাদ্রাসা পর্যায়ে ইবতেদায়ি ৫ম, দাখিল ৮ম ও স্কুল পর্যায়ে ৮ম শ্রেণি থেকে অংশ নিচ্ছে মোট ৬ হাজার ৪৪১ জন শিক্ষার্থী।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় ইবতেদায়ি ৫ম, দাখিল ৮ম ও স্কুল পর্যায়ে ৮ম শ্রেণির এ পরীক্ষা মোট ১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

একই দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ৮ম শ্রেণির স্কুল পর্যায়ে ফেনী সদর উপজেলা থেকে ১ হাজার ৫৭৯জন, পরশুরামে ২৩৭ জন, সোনাগাজীতে ৪১৫ জন, ছাগলনাইয়ায় ৪২৭ জন, দাগনভূঞায় ৬৭৯ জন ও ফুলগাজীতে ২৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে।

মাদ্রাসা পর্যায়ে ইবতেদায়ি ৫ম ও দাখিল ৮ম শ্রেণির পরীক্ষায় ফেনী সদর উপজেলা থেকে অংশ নেবে ৯৫৬ জন, পরশুরাম ১৮৬ জন, সোনাগাজী ৪৩৮ জন, ছাগলনাইয়া ৫১৪ জন, দাগনভূঞা ৫৮০ জন ও ফুলগাজী থেকে ১৬০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।

এদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই পরীক্ষার কার্যক্রম রিটের প্রেক্ষিতে এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এ পরীক্ষা। পরীক্ষার নীতিমালা অনুযায়ী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মোট পাঁচটি বিষয়ে মূল্যায়ন করা হবে। বিষয়গুলো হলো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ১০০ নম্বর করে এবং বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৫০ নম্বর করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে মোট ৪০০ নম্বরের ওপর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। সূচি অনুযায়ী, রোববার বাংলা (বিষয় কোড ১০১), ২৯ ডিসেম্বর সোমবার ইংরেজি (১০৭), ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গণিত (১০৯) এবং ৩১ ডিসেম্বর বুধবার বিজ্ঞান (১২৭) ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (১৫০) বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথকভাবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট করে। ফলে ওই দিন মোট তিন ঘণ্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার সব প্রশ্ন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ দৈনিক ফেনীকে বলেন, জেলার প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে নির্ধারিত কেন্দ্রে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সার্বিক বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পরীক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ নজরদারি ও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা জানান, রিটের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ইবতেদায়ি ৫ম শ্রেণি, দাখিল ৮ম শ্রেণি এবং স্কুল পর্যায়ের ৮ম শ্রেণির পরীক্ষা আজ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, পরীক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছিল সরকার। এরপর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হয়েছিল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে একই সিলেবাসের আদলে অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষার নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছরও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। নেওয়া হয়নি বৃত্তি পরীক্ষাও। এবার এ বছর থেকে দীর্ঘসময় পর অষ্টম শ্রেণিতে ফের চালু হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা।

জেলার যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা
সারাদেশের ন্যায় একযোগে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ফেনী জেলায় অংশ নিচ্ছে মোট ৬ হাজার ৪৪১ জন শিক্ষার্থী। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা স্কুল পর্যায়ে ৮ম, মাদ্রাসা পর্যায়ে ইবেতাদায়ি ৫ম ও দাখিল অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা মিলিয়ে ৬ উপজেলার মোট ১২টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী, জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা স্কুল পর্যায়ে ফেনী সদর উপজেলার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, পরশুরাম উপজেলার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে পরশুরাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, সোনাগাজী উপজেলার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, ছাগলনাইয়া উপজেলার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ছাগলনাইয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে, দাগনভূঞা উপজেলার পরীক্ষার্থীরা আতাতুর্ক সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেবে এবং ফুলগাজীর কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ফুলগাজী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।

মাদ্রাসা পর্যায়ে ইবতেদায়ি ৫ম ও দাখিল ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ফেনী সদর উপজেলার আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসায়, পরশুরাম উপজেলার কেন্দ্র করা হয়েছে পরশুরাম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, সোনাগাজী উপজেলার পরীক্ষার্থীরা অংশ নেবে সোনাগাজী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে, ছাগলনাইয়া উপজেলার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ছাগলনাইয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায়, দাগনভূঞা উপজেলার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে দাগনভূঞা আজিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এবং ফুলগাজী উপজেলার কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে মুন্সিরহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়।

মানতে হবে ৭ নির্দেশনা
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিন বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর পাঁচটি বিষয়ের ওপর মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত—এই তিন বিষয়ে ১০০ নম্বর করে মোট ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাকি ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়—এই দুই বিষয় মিলিয়ে। চলতি বছর অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি ৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ আসনে বসতে হবে। বিশেষ কারণে দেরি হলে রেজিস্টার খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করে প্রবেশের অনুমতি নেওয়া যাবে, কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন করতে পারবে না, পরীক্ষার্থীদের ওএমআর ফরমে বলপেন ব্যবহার করে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোডসহ প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না, বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ৮টি মডেলের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। মডেলগুলো হলো—Fx-82MS, Fx-100MS, Fx-570MS, Fx-991MS, Fx-991Ex, Fx-991ES, Fx-991ES Plus এবং Fx-991CW এছাড়া সাধারণ (নন-সায়েন্টিফিক) ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। অনুমোদিত মডেলের বাইরে কোনো প্রোগ্রামেবল বা নিষিদ্ধ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা নেওয়া হবে না। প্রাকৃতিক জরুরি কারণ ছাড়া পরীক্ষাকালীন কক্ষ ত্যাগ করা যাবে না। পরীক্ষা শেষে কক্ষপরিদর্শক উত্তরপত্র সংগ্রহের আগ পর্যন্ত আসন ত্যাগ করা নিষিদ্ধ, পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হবে ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে সতর্ক ঘণ্টা বাজানো হবে। সমাপ্তি ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে, অতিরিক্ত উত্তরপত্র (লুজ শিট) ব্যবহার করলে তাতে পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, পরীক্ষা কেন্দ্র ও বিষয় কোড সঠিকভাবে লিখতে হবে। লুজ শিট গ্রহণের সময় কক্ষপরিদর্শকের স্বাক্ষর রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে মূল উত্তরপত্রের কভার পেজে ব্যবহৃত লুজ শিটের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। লুজ শিটে লেখা উত্তরগুলো ক্রমানুসারে সাজিয়ে স্ট্যাপল বা সেলাই করে জমা দিতে হবে।