আজ বিশ্ব প্রাণী দিবস। বিশ্ব প্রাণী দিবসের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের কল্যাণের মাধ্যমে এদের অবস্থার উন্নতি করা। জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দিবসটিতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালন করা হয়। জীববৈচিত্র্যের একাংশ জুড়ে রয়েছে প্রাণীকুল। প্রাণীরা পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিটি প্রাণী তার কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে জীবজগৎ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার সাথে প্রত্যেক প্রাণী জীবনযুদ্ধ করে প্রাণী ও খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষা করে চলেছে।
বিশ্ব প্রাণী দিবস সর্বপ্রথম হেনরীক জিম্মারমেন নামের একজন জার্মান লেখক এবং প্রকাশক মেন্স উন্ড হুন্দ/ মানুষ এবং কুকুর নামের ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিন স্পোর্ট প্যালেসে এই দিবস উদযাপন করেন। ৫,০০০ এর অধিক লোক এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল। এই দিবস মূলত বাস্তুসংস্থানবিদ্যার সন্ত, সেন্ট এসিসির ফ্রান্সিসের ভোজ উৎসবের সঙ্গে সংগতি রেখে ৪ অক্টোবর পালন করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ে স্থান সংকুলনের কারণে এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়নি।
১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো এই দিবসটির ৪ অক্টোবর পালন করা হয়। প্রথম দিকে তিনি কেবল এই দিবসটিতে জার্মানি, অষ্ট্রোলিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়ার অনুসারী পান। অবশেষে, ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা কংগ্রেসের তার উত্থাপন করা প্রস্তাবমতে ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয।
প্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করে বর্তমানে বিশ্ব প্রাণী দিবস একটি বৈশ্বিক পরিণত হয়েছে, যেটাকে ২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রাণী কল্যাণ চ্যারিটি নেতৃত্ব এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এফএও প্রতিবেদনে জীববৈচিত্র্য হ্রাসের পাঁচটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের অতি আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া এবং আগ্রাসী প্রজাতির দ্রুত বিচার। এ ধরনের আশস্কাজনক প্রবণতা, অর্থনীতি, সমাজ, জনজীবন ও জীবিকা, খাদ্য সুরক্ষা, জন সুরক্ষা সেই সঙ্গে মানুষের জীবন মানবেও বিপন্ন করে তুলছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাষ্ট বাংলাদেশ ও দ্য ও কনজারভেশন ইউনিয়ন বাংলাদেশ শাখার এক জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। দেড়শ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ১৩ প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণী, ৪৭ প্রজাতির দেশি পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর, ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী ১০টি মিলিয়ে প্রায় তিনশ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আছে বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
ডাব্লিউডাব্লিউএফ ইন্টারন্যাশনালের মহাপরিচালক মার্কো ল্যাম্বেরটিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমরা সারা বিশ্বে ৬০ শতাংশ বন্যপ্রাণী হ্রাসের হিসাব নথিভুক্ত করেছিলাম কিন্তু এখন তা কমে যাওয়ার হার প্রায় ৭০ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
প্রাণীরা সাধারণত জীবন ধারণ করার জন্য অন্য জীবের ওপর নির্ভর হয়ে থাকে। কখনও তারা নিজেদের কর্মকান্ডের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আবার কখনও প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিলুপ্ত হওয়ার পথে যে প্রাণী গুলো রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হাতি।
আইইউসিএন পরিচালিত হাতি সমীক্ষা ২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের ২১০ টি থেকে ৩৩০টি হাতি ছিল। তাছাড়া ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমানা দিয়ে চলাচলকারী অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৭৯ থেকে ১০৭ টি। পোষা হাতির সংখ্যা ছিল ৯৬টি। কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান অঞ্চলের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে ওই অঞ্চলে হাতগুলো বিপদের মুখে। বর্তমানে শুধু যে বন্যপ্রাণী নিরাপত্তাহীনতায় আছে, তা নয়। লোকালয়ে থাকা কিংবা পোষা প্রাণীরা বিভিন্নভাবে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) শহরেরর ৩০ হাজার কুকুরকে অন্য জেলায় স্থানান্তরের কার্যক্রম ঘোষণা করে। পরিবেশবিদ ও কুকুরপ্রেমীরা এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কুকুরগুলো ময়লা- আবর্জনা খেয়ে রাস্তা পরিষ্কার রেখে মানুষকে সহায়তা করে এবং তারা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে। তাছাড়াও কুকুর নীরব প্রহরীর মতো মানুষকে নিরাপত্তা ও দিয়ে আসছে।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, বন বাঁচলে বাঁচবে প্রাণী, বাঁচবে মানুষ ও প্রকৃতি। তাই বিশ্ব প্রাণী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক প্রাণী সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ।