‘রত্নগর্ভা‘ খালেদা খানম। একজন গর্বিত জননী। তিনি ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা’র অন্যতম নেত্রী ও এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার সাজেদা সুইটির (সুইটি সাজেদা) মা। জীবন-যুদ্ধে বিজয়ী এই লড়াকু মায়ের আজীবনের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও কষ্টের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি আজাদ প্রোডাক্টস আয়োজিত ২০২০ সালের জন্য ‘রত্নগর্ভা-২০২০’ খেতাব পাচ্ছেন।

‘রত্নগর্ভা’ মা খালেদা খানমকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা (এফএসএফডি)-এর সভাপতি তানভীর আলাদিন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া। ‘রত্নগর্ভা’ মা খালেদা খানমের সুস্বাস্থ ও দীর্ঘজীবন কামনা করেন তারা।

সাজেদা সুইটি জানান, আজাদ প্রোডাক্টস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকাল কেটে গেলে এ্কটা সুবিধাজনক সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা খালেদা খানমের হাতে তাঁর ‘রত্নগর্ভা’ পদক হস্তান্তর করবেন।


আসুন আমরা এই রত্নগর্ভা মায়ের সম্পর্কে একটু শুনি

মেট্রিক পাস করে সবে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ কলেজে ভর্তি হয়েছেন খালেদা খানম। রেলওয়ে কর্মকর্তা বাবার ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনিই বড়। নানা দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাবে চিন্তা বাড়ে মা দিল আফরোজের। চিকিৎসক এক পাত্র পছন্দ হয়। মেয়ের বাবাকেও জোরাজুরিতে নিমরাজি করানো গেলো। আর খালেদার মত? বিয়েতে মেয়ের মত জানার রেওয়াজ তখনো শুরু হয়নি।


বিয়ে হয়ে যায় খালেদার। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হলেও অসুস্থ শাশুড়ির মতের প্রাধাণ্যে ফেনীতে শ্বশুরের গ্রামের বাড়িতেই তাঁর দাম্পত্য শুরু। পরে যদিও শ্বাশুড়িসহ স্বামীর সঙ্গে মফস্বল শহরগুলোতে কেটেছে জীবনের বড় অংশ। ঘরের আদরের বড় দুলালী, কখনো রান্নাঘরে যেতে হয়নি, অথচ বিয়ের পর লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্না শেখেন খালেদা খানম। শহুরে মেয়ে, ঘরালু কাজ পারে না বলে শ্বশুরবাড়িতে আসা মেহমানদের বিস্ময়মাখা নানা মন্তব্যতো শুনতেই হচ্ছিলো। কিন্তু খালেদা যেন মাটির দলা, দ্রুত সময়ে একদম নতুন ছাঁচে গড়লেন নিজেকে।


সংসারে নিপুনা হয়ে ওঠেন, হাজারটা দায়িত্ব, সন্তান, ঘরভরা মেহমান সামলান। সবার মাঝে ভারি ‘লক্ষ্মী বৌ’ বলে পরিচিতি তাঁর। সবচে বেশি আলোচনা হতো তার মায়া-মমতার। কেউ কেউ নিজের পুত্রবধূকে নিয়ে আসতেন, খালেদা খানমকে দেখে যেন শেখে। কিন্তু এতোকিছুর মাঝে বিসর্জন হয়ে গেছে খালেদার নিজের পড়ালেখা, গান-নাচ, আরো নানা শখ-আহ্লাদ। কাছেই সরকারি স্কুল, সেখানে শিক্ষকতার সুযোগটাও ঠেলতে হলো সংসারের সন্তানের মমতায়।


এভাবে নিজেরটুকু বিসর্জন দিতে হলেও চার সন্তানের চাহিদার কমতি যেন না পড়ে সেই চেষ্টা করে গেছেন প্রাণপণে। এ যুগের মতো একক সংসার হলে বেশ ভালোভাবেই চলতে পারতেন স্বামীর আয়ে। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, অসুস্থ-অভাবী, দূরসম্পর্কের আত্মীয়-পরিজনসহ... সবাইকে নিয়েই বাঁচতে ভালো লাগে তাঁর।

অনেক বিষয়ে ছাড় দিলেও চার সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করা, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ার চেষ্টায় কোনো ছাড় দেননি এই মা। নিজের সাজ-পোশাক, শাড়ি-গয়নার শখ জলাঞ্জলি দিয়ে সন্তানদের ছোট ছোট চাহিদা পূরণ করে গেছেন। আজ তাঁর ছেলেমেয়েরা ব্যক্তিগত ও পেশা জীবনে মা-বাবার সেই দায়িত্ববোধ, ত্যাগ-বিসর্জন, মানুষের প্রতি মমতা আর সাদামাটা জীবনযাপনের শিক্ষাটা চর্চা করছেন।


এমন মায়ের আজীবনের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও কষ্টের স্বীকৃতি হিসেবে চাই ‘রত্নগর্ভা’ খেতাবটা পেলেন।


এই সম্মান ও স্বীকৃতি অন্য মায়েদেরও উৎসাহ বাড়াবে। আর সন্তানরাও যেন বোঝেন- মায়ের কষ্ট সফল করা ও সুস্বীকৃতির দায়িত্ব তাদেরই।