‘আমাদের কটূক্তি নয়, পাশে থাকুন। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড রোগীকে সেবা দেয়ায় ডাক্তারদের বাড়িওয়ালা বের করে দিচ্ছে, কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিচার বসাচ্ছেন। আমরা এ দুর্যোগে পিছপা হবো না, রোগীকে সেবা দেয়া আমাদের কর্তব্য।’ - ফেনীতে কোভিড-১৯ রোগীর সেবায় নিয়োজিত ডাঃ সুমন আলী এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করলেন।


ফেনীতে করোনা ডেডিকেটেড হসপিটাল ট্রমা সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন এ পর্যন্ত শনাক্ত দুইজন করোনা সংক্রমিত রোগী। স্বাস্থ্য বিভাগের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চারটি টিমের প্রথম টিম শুক্রবার হতে দিনরাত হাসপাতালে দায়িত্বপালন করছেন। দশদিন পর দায়িত্বে আসবেন দ্বিতীয় দল, প্রথম দল চলে যাবেন চৌদ্দ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। এভাবে চলবে একের পর এক দল।


প্রতিটি দলে রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক, তিনজন সেবিকা এবং একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও প্রহরী।


প্রথম দলে রয়েছেন ফেনীর তিন কৃতি সন্তান ৩৯তম বিসিএস এর ডাঃ এ বি এম নাইম হাসান, ডাঃ সুমন আলী এবং ডাঃ অর্ণব বণিক। তিন বীর যোদ্ধার সাথে সেবিকা হিসেবে আছেন ফেনী শারমীন সুলতানা, গীতা রাণী দেবী এবং জুঁই শম্পা রোজারিও।


সারাবিশ্বে করোনার মহামারিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে পঁচিশ লক্ষ মানুষ, মৃতের সংখ্যা পৌনে দুই লাখ। এরচেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ভীতি। এমনই এক পরিস্থিতিতে দেশের সরকার প্রধান স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।


করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় ডাঃ নাইম হাসান নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার জন্য এটি একটি সুযোগ দেশের ক্রাইসিস মোমেন্টে কাজ করা। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবু দেশের কথা ভাবলে সব ভুলে যাই। ডাঃ সুমন বলেন এখন একটাই চিন্তা, মানুষ আমাদের দিকে চেয়ে আছে। ডাঃ অর্ণব বলেন, চিকিৎসক পেশাটা মনে ধারণ করি। এখন দেশকে দেয়ার সময়, আমরা সবটুকু দিয়ে করবো।


বাবা, মা, পরিবারের মত প্রসঙ্গে ডাঃ সুমন বলেন, আমার স্ত্রী ডাক্তার, সেও সেবা দিচ্ছে। কোভিড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছি জানলে মা অসুস্থ হয়ে যাবেন তাই মাকে বলিনি, ফেইসবুক আইডি স্থগিত রেখেছি যেন আত্মীয় স্বজন শংকিত না হয়। ডাঃ অর্ণব বলেন, পরিবার পরিজন খুব চিন্তা করছে কিন্তু আমি দায়িত্ব পালনে যতদুর যেতে হয় ততদুর যাবো।


ডাঃ অর্ণব বলেন, সুস্থ হতে প্রয়োজন সাহস আর মনোবল। গণমাধ্যমে করোনার ভীতিকর খবর প্রকাশের চেয়ে চিকিৎসায় সাফল্যের খবর বেশী আসুক, এতে মানুষের ভীতি কমবে। এটি এমন একটি সংক্রমণ, যেকোনোভাবে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে।


ফেনীর দুইজন কোভিড রোগী ভালো আছেন বলে জানালেন, চিকিৎসকগণ। তারা জানান, ছাগলনাইয়ার আক্রান্ত ব্যক্তির আবার পরীক্ষা করা হবে। সোনাগাজীর আক্রান্ত ব্যক্তিও এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে।