ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নে কালিদাস পাহালিয়া নদীর ভাঙন রোধে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগ ভরাট করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সরেজমিনে স্থানীয় মানুষদের এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দৈনিক ফেনী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী থেকেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও টিউব ব্যাগ ভরাট করে ভাঙন রোধের কাজ চলছে। এতে ভাঙন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে লেমুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌস কোরেশী জেলা প্রশাসকের কাছে গত ২ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এতে নদী ভাঙন রোধের চেয়ে ভাঙন আগের চেয়ে তীব্র হবে। এ আশঙ্কার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্পের কাজ শুরু করলে তা বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, লেমুয়া বাজার সংলগ্ন সওদাগর পাড়ায় ভাঙন রোধে গত ১ ডিসেম্বর জিও টিউব স্থাপনে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় এ কাজের জন্য ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নুরুন্নবী নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে পাইপলাইন দিয়ে ব্যাগ ভরাট করছিলেন।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই ড্রেজিংয়ের কারণে পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও বসতভিটা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে চাঁদপুর আদর্শ সমাজের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, যে স্থান থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার অল্প দূরেই কামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজনের বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে এ স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শিহাব উদ্দিন দৈনিক ফেনীকে বলেন, জিও টিউব ব্যাগ বসিয়ে প্রায় ১০০ মিটার ভাঙন এলাকা সুরক্ষা দিতে ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে কাজ স্থগিত আছে। নির্ধারিত দেড় মাসের মধ্যে কাজ শুরু না হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, গত বছরের বন্যায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, যা অস্থায়ী হওয়ায় নদীতে বিলীন হওয়া স্বাভাবিক। পর্যাপ্ত বরাদ্দ মিললে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌস কোরেশী বলেন, নদীর অপর পাশ থেকে তিনটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এ পাশের রাস্তা ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে নদীর কয়েকটি স্থানে বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মসজিদ ও কবরস্থানও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। নদীর দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও টিউব ব্যাগ বসানোর উদ্যোগ নিলে কাজ শুরু হওয়ার পরই বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা।
