ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির উদ্দিনকে হামলার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান মাসুদের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের ঠিকাদারি না দেওয়ায় বাবা মা তুলে গালিগালাজ, ল্যাপটপ ফেলে দেওয়া এবং শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ করেছেন ওই প্রকৌশলী। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাসুদ।

ইঞ্জিনিয়ার জাকির উদ্দিন বলেন, আমার কার্যালয়ে এসে তিনি গালিগালাজ ও আচরণে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। ল্যাপটপ ছুড়ে ফেলেছেন, ফাইলপত্র নষ্ট করেছেন। বর্তমানে ২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। এটি ৩ স্তরে রিভিউ হয়, সরকারি নিয়ম মেনে ইজিপির মাধ্যমে আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাকে চাপ দিচ্ছেন নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ দিতে।

তিনি আরও বলেন, বাবা-মাকে জড়িয়ে তিনি গালিগালাজ করেছে, বলেছে- কে তোকে স্বাক্ষর করতে বলছে, তোর হাত কেটে নেব। এসময় বাইরে প্রায় ২শ ছেলে অবস্থান করছিল। বিষয়টি পৌর প্রশাসক আইনগতভাবে দেখতে পুলিশকে জানিয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ার জাকির দাবি করেন, ফেনী পৌরসভা এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আওতাধীন ‘নোডাল সিটি’ প্রকল্প পাচ্ছে। এখানে ১৩টি পৌরসভা ও একটি সিটি করপোরেশন নিয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হবে। এর প্রথম ধাপের ২৮ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। “আমরা যদি শুরুতেই এমন বাধার মুখে পড়ি, তাহলে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল হাসান মাসুদ বলেন, বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছিল ঠিকাদারির টাকা পাওয়ার বিষয়ে। কিন্তু হেনস্তার যে অভিযোগ তুলছেন সেটি মিথ্যা। তিনি পিসির দেড় শতাংশ টাকা চাইছে। আমরা বলেছি এ টাকা দেব না। তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরও দাবি করেন, আমার তুহিন এন্টারপ্রাইজ ও নাছির এন্টারপ্রাইজ নামে কিছু কাজ আছে। সেগুলোর বিল আটকে রাখা হয়েছে দেড় শতাংশ পিসি না দেওয়ায়। পৌরসভা প্রশাসক ও প্রকৌশলী মিলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কমিশন নিয়ে অন্যদের কাজ দিচ্ছে। ফুলকলির নামে একটি কাজ আড়াই মাস আগে শেষ করেছি, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকের ছাড়পত্র দেননি। ওনাকে বললে তিনি বলেন পিসির দেড় শতাংশ টাকা বাকি আছে। এটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে প্রকল্প পরিচালকের টাকা ছাড় করবে না৷ আমি দেড় শতাংশ টাকা দেব না বলে জানাই। এটি নিয়ে ওনার সাথে তর্কাতর্কি হয়েছিল।

মাসুদ দাবি করেন, আমি দরপত্রের মাধ্যমে ২৮ কোটি টাকার কাজ পাইনি। বরং তারা একটি প্রকল্পে ২৮ লাখ টাকায় চুক্তি করেছে। ফলের ঝুড়ি দিয়ে ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার ও পৌর প্রশাসককে খুশি করছে। আহমেদ ফিরোজ নামে এক ঠিকাদারের নকল সিল ব্যবহার করে দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবুও তারা সে কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছে।

বিএনপি নেতা মাসুদ অভিযোগ করে বলেন, তিনি আমার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি আটকে রেখেছে। ওনাকে এগুলা নিয়ে বলাতেই তিনি পিসি চাইতেছে। আমি এর আগেও অন্য একটি কাজে ওনাদের ৩ শতাংশ টাকা ৩০ হাজার দিয়ে দিয়েছি।

নির্বাহী প্রকৌশলীকে হামলার বিষয়ে ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মাসুদ সাহেব এক পক্ষের হয়ে দরপত্র দাখিল করেছিল, সেটি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ‘পিসি’ নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

প্রশাসক আরও বলেন, তার পূর্বের কাজের সব বিল পরিশোধ করা হয়েছে। দুটি কাজ চলমান রয়েছে, চূড়ান্ত বিলের কোনো বকেয়া নেই।

এ প্রসঙ্গে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।