বন্ধুদের সাথে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের খৈইয়াচড়া ঝর্ণায় ঘুরতে যাওয়ার পথে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মো. রবিউল ইসলাম রবি (২০) নামে এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ফেনীর কালিদহ রেলওয়ে এলাকায় চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেন থেকে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রবিউল কুমিল্লা জেলার কচুয়া এলাকার মো. দুলাল হোসেনের ছোট ছেলে। তিনি কুমিল্লার সুঁয়াগাজী এলাকায় একটি জাল ফ্যাক্টরিতে অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড যাওয়ার উদ্দেশ্যে শুক্রবার ভোরে কুমিল্লা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে উঠেন ৫ বন্ধু। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে অন্যদের দেখাদেখি ৫ বন্ধু ট্রেনের ছাদে উঠে পড়েন। ট্রেন কালিদহ এলাকা অতিক্রম করার সময় চলন্ত ট্রেনের ছাদে অবস্থানরত রবি উঠে দাঁড়াতে গেলে গাছের ডালের ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে প্রেরণ করেন।

নিহত রবির বন্ধু ফাহিম বলেন, আমরা ৫ বন্ধু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের খৈইয়াচড়া ঝর্ণা দেখার জন্য ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনে প্রথমে ফেনী পৌঁছাই। ফেনী স্টেশনে অনেককে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখে বাড়তি আনন্দের জন্য আমরাও ছাদের উঠে একসাথে বসে পড়ি। ট্রেন চলা শুরু করলে কালিদহ এলাকা অতিক্রম করার সময় রবি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আমরা তাকে বসে পড়তে বলার আগে সে গাছের ঢালের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায়। পরে ট্রেন সীতাকুণ্ড গিয়ে থামলে আমরা বাকী ৪ বন্ধু ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসি। এসে শুনি সে মারা গেছে।

অপর বন্ধু রাফি বলেন, আনন্দ করার ৫ বন্ধু জন্য একসঙ্গে বের হয়েছি। অসাবধানতার কারণে আমাদের আনন্দ এখন বিষাদে রুপ নিয়েছে। আমরা তার পরিবারকে কি বলে শান্তনা দেব।

নিহত রবিকে হাসপাতালে আনয়নকারী সিএনজি চালক সেলিম মিয়া বলেন, কালিদহ এলাকায় ভাড়া নিয়ে গিয়েছিলাম। যাত্রী নামিয়ে আসার সময় স্থানীয়রা একজন আহত ব্যক্তিকে উঠিয়ে দেয়। আমি তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে তার বন্ধুরা এলে তাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসি।

রবির ভগ্নিপতি ফোরকান হোসেন বাপ্পি বলেন, ৩ ভাইবোনের মধ্যে রবি সবার ছোট। সে আমার সাথে সুঁয়াগাজীর কমলাপুর গ্রামে জাল ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওর এক বন্ধু কল করে ওর মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে আমরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে এসেছি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার মাথা, ঘাড় ও পায়ে কাটা ক্ষত ছিল। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ট্রেনের ছাদ থেকে ছিটকে পড়ার পর ওই কিশোরকে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান।