ফেনীতে চাঞ্চল্যকর ইউনুস বাবু (২২) খুনের ঘটনায় তারই বন্ধু ইউনুছ নবী রাকিবকে হত্যাকারী দায়ী করছেন বাবুর মা রেজিয়া বেগম। আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) সকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বারবার এ অভিযোগ করছিলেন তিনি।
রেজিয়া বেগমের দাবি, রাকিবসহ আরও কয়েকজন বাবুকে বাসা হতে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে শনিবার রাত থেকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফেনী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কদলগাজী রোডের রেনু হাজারী বাড়ির নুরুল আলমের ছেলে মোঃ ইউনুছ নবী রাকিব পলাতক রয়েছে।
আরও পড়ুন ⇒ ‘বাবুর মাথায় ছিল ৫টি কোপের দাগ, গলায় রশি পেঁচানো’
বাবুর মায়ের দাবি, সুযোগ থাকাও সত্ত্বেও ফেনী মডেল থানার এসআই বিকাশ রাকিবকে আটক করেনি। বরং ফেঁসে যাবার ব্যাপারে রাকিবকে সতর্ক করেছিল এসআই বিকাশ।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই বিকাশ মুঠোফোনে জানান, আমাকে জড়িয়ে রাকিবের মায়ের অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়। বাবুর মা ছেলের সন্ধানে রাকিবের সাথেই থানায় এসেছিলেন। তখনো রাকিবের বিরুদ্ধে তার মায়ের কোন অভিযোগ ছিল না। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আহত শাহরিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমি চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদে শাহরিয়ার জানিয়েছে, ঘটনার রাতে ভবনের কেয়ারটেকার শাহীন, বাবু এবং সে একসাথে ছিল। তবে শাহরিয়ার অসুস্থ থাকায় এর বেশি কিছু বলতে পারে নি।
বিকাশের ব্যাপারে বাদীর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাকে হত্যা মামলার তদন্ত করার ভার দেয়া হয়নি। তার পরিবর্তে তদন্তের দায়িত্বভার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সুদ্বীপ রায়কে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন ⇒ ‘তাসপিয়া ভবনের সেপটিক ট্যাংকে মিলল আরও এক যুবকের লাশ’
তদন্ত কর্মকর্তা সুদ্বীপ রায় জানান, এ ঘটনায় কেয়ারটেকার শাহীন ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১০দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আদালত মঞ্জুর করলে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রাকিবকে গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মোঃ ইউনুছ নবী রাকিব ফেনী পৌর ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার ফেইসবুক প্রোফাইল ইনফোতে লেখা আছে, সে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি। তবে রাকিব ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কোন কমিটি কিংবা পদ পদবীতে নেই বলে জানিয়েছেন পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রাজু। তিনি বলেন, রাকিব ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে নেই। তবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত সে।
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, রবিবার সকালে বাবুর মা বাদী হয়ে রাকিব ও কেয়ারটেকার শাহীনকে আসামী করে ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আটক কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহীনের ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার কারণ ও এর পেছনে আর কেউ জড়িত আছে কিনা বের করা যাবে। ওসি জানান, ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও রাকিবকে আটক করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন ⇒ ‘পাঠানবাড়িতে যুবককে কুপিয়ে ফেলা হয়েছিল সেফটি ট্যাংকে’
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বাবুর লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রিপন নাথ জানান, অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধারকৃত লাশটিতে ইতোমধ্যে পঁচন ধরেছে। সাধারণত এ ধরনের লাশের ময়নাতদন্ত করতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। ফেনীতে সে সুবিধা না থাকায় লাশটি চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে মা রেজিয়া বেগমের সাথে শেষবার কথা হয় চীনের আনুহ ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়া বাবুর। মাকে বলেছিলেন, ঘরে ফিরছেন তিনি। তারপর থেকে গত তিনদিন ধরে তার কোন খোঁজ নেই। তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় গেলেও কোন সন্ধান পায়নি তার পরিবার। শনিবার (১০ অক্টোবর) রাতে বাবুর খোঁজে শহরের পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিসের মনির উদ্দিন সড়কের তাসপিয়া ভবনে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। ভবনের মালিক তখন তাদের ভেতের ঢুকতে দেয়নি। পরে তিনি আবার থানায় ফিরে যান। পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা এলে তালা খুলে দেয়া হয়। তখন সেপটিক ট্যাংকের ভেতর তল্লাশী চালালে সন্ধান মেলে বাবুর মরদেহের। পরে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এর আগে শুক্রবার ভোরের দিকে একই ট্যাংক হতে শাহরিয়ার নামে অপর যুবককে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয় ও শাহীনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরের দিন শনিবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে শাহীনকে হাজির করে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিকাশ চক্রবর্তী। শাহীন সেপটিক ট্যাংকে বাবুর লাশ থাকার বিষয়টি গোপন রেখে কৌশলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছিল।