সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একে অপরকে ঘায়েল করে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকালে সরকারি ত্রাণ বন্টন ও গুজব বিষয়ে শহরের মাষ্টারপাড়ায় নিজ বাসভবন প্রাঙ্গনে ফেনী সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।
মতবিনিময়ে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরন ও সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে এবং নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে বিভিন্ন লোকজন আমাদের সফলতাকে নস্যাৎ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এ ধরনের কাজে যদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যুক্ত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে জেলা আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সাংসদ বলেন, আমার সাথে এ ব্যাপারে গতকাল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে বৈঠক হয়েছে। তিনি কত বড় নেতা বা জনপ্রতিনিধি সেটা আমরা দেখবো না। আপনারা নাম দেবেন, তাকে ওই এলাকা ধরে এনে থানার লকআপে ঢুকানো হবে।
এসময় সামনের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি বলেন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের ভেতরে আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নমিনেশন পেয়ে যাবেন সেটা ভাবা আপনাদের ঠিক হবে না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই তাদের নেতা ঠিক করবে। যে লোকটি দলের বদনাম করে নমিনেশন পাবে, তাকে যদি আমি নমিনেশন দেই তাতে আরও দশজন উৎসাহিত হবে। সুতরাং এ ধরনের জঘন্য ঘৃণ্য কাজ আমি জীবন থাকতে করবো না এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার নমিনেশন পাঠাবো না।
গুজব রটনাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা ফেইসবুকে বা বিভিন্ন মিডিয়াতে একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছেন, আপনারা দয়া করে সে কাজটি করবেন না। আপনাদের কারো বিরুদ্ধে যদি কিছু বলার থাকে, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছে, তাদেরকে বলবেন। এরপরও আপনাদের সমস্যা সমাধান না হয় তো আমি আছি। আমাকে বলবেন।
উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে দলাদলি না করে আপনারা প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করে কাজ করুন। আপনারা সবাই আন্তরিক হলে আমরা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ ভয়াবহ মহামারী হতে মুক্তি পাবো।
সাংসদ বলেন, আপনাদের ভালোবাসার কারণেই আমি করোনার এ পরিস্থিতিতেও বারবার ফেনী আসি। আমি যে একজন সংসদ সদস্য তা আমি কখনো মনে করিনি, এখনো করছিনা। আমরা সবাই মিলেই এ ফেনীকে রক্ষা করতে চাই। আমরা একটি পরিবারের মত। আমরা পরিবারের ভেতরে প্রত্যেককে একে অপরের সহানুভূতিশীল হতে হবে।
এসময় ত্রাণ বিতরণ নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যারা পেয়েছে তাদের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে যারা পাইনি তাদের প্রতি গুরুত্ব দেবেন।
ওমমএস’র চাউল বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে ১৮টি ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে প্রতি কার্ডে মাসে ৫ কেজি করে চাল দেবার সিদ্ধান্ত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আগে প্রতি ওয়ার্ডে ৪শ জনকে চাল দেবার কথা ছিল এখন সেখানে প্রতি ওয়ার্ডে ৩৩৩জনকে চাল দেয়া হবে। এসময় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তালিকা পুনবিন্যাস করে ৩৩৩ জন করার কথা বলেন সাংসদ।
মতবিনিময়ে ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি করিম উল্লাহ বিকম, সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীসহ সদরের ১২ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।