কন্যা শিশু দিবস আসে যায়। কন্যা শিশু হত্যার বিচার হয় না। সাক্ষীর অভাবে কন্যা শিশু হত্যা মামলাগুলোর বিচার ঝুলে আছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোর্ট পরিদর্শক পেয়ার আহমেদ জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। খবর নিয়ে দেখবো।
এডভোকেট হাফেজ আহমেদ বলেন, সমন পাঠানো হলে আদালতে সাক্ষী আসে না। সাক্ষীর অভাবে কন্যা শিশু হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট জিএ একাডেমির দশম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার সময় নুরুল আফছার বাপ্পি (২১) জোরপূর্বক অপহরণ করে। এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে সদর হাসপাতাল মোড় এলাকার মনির আহাম্মদের ছেলে নুরুল আফছার সহ ৩ জনকে আসামি করে ২২ আগস্ট ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলার এখনো বিচার শুরু হয়নি।
ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের মাদ্রাসা ছাত্রী শিশু জেসমিন আক্তার লিজা (৯) হত্যা মামলার চার্জ গঠন হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেনি আদালত। ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সিরাজ উদ্দিনের আদালতে চার্জশীট গ্রহণ করে বিচারের জন্য নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে প্রেরণ করে। আসামী মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রকাশ লিটন চন্দ্র দাস (৪৩) এর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমানিত হওয়ায় গত বছর ৩১ মে আদালতে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফুলগাজী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ড) মোঃ আসাদুজ্জামান অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২২ সালের ১২ জুন লিজা হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম (৪২) কে রংপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান আসামী সাইফুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমাতুজ জোহরা মুনার আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। সাইফুল ইসলাম নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বাসিন্দা। সে ফুলগাজীতে ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ করে। ফুলগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, ২ জুন ২০২২ সালে নিখোঁজের ৭ দিন পর মাদরাসা ছাত্রী জেমি আক্তার লিজার (৯) নামে ওই শিশুর অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উপজেলার আমজাদহাট ভূমি অফিস সংলগ্ন মসজিদের পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অর্ধগলিত লাশ করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। নিহত জেমি আক্তার লিজা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তেলিয়াপাড়ার মমিনুল ইসলামের মেয়ে। পরিবারসহ ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তারাকুছা গ্রামে তারা বসবাস করে। জেমি আক্তার লিজা স্থানীয় নেয়াজ ফয়জুন্নেসা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলো।
লিজার মা জেসমিন আক্তার জানান, গতবছর ২ জুন বিকালে আমজাদহাট বাজারে জেঠার বাসায় যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় লিজা। এরপর থেকে লিজা নিখোঁজ হলে তাকে অনেক খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে গত বছর ৪ জুন শনিবার সন্ধায় ফুলগাজী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে এ ঘটনায় লিজার পিতা মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ফুলগাজী থানায় মামলা দায়ের করে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফুলগাজী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ড) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, আসামী লিজাকে দীর্ঘদিন নানাভাবে প্রলুব্ধ করার কারণে বাদীর সাথে আসামীর বাদানুবাদ হলে সৃষ্ট ক্ষোভের কারণে চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে লিজাকে হত্যা করে লাশ গুম করার লক্ষ্যে আমজাদহাট বাজারস্থ ইউনিয়নের ভূমি অফিসের পূর্ব পার্শ্বে বাংলা পুকুরে কুচুরীপানার নিচে লুকিয়ে রেখে আসামী আত্মগোপনে চলে যায়।
২০২২ সালে ২৫ জুন দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের নেয়াজপুর এলাকায় ছয় বছর বয়সী শিশু মিফতাহুল মালিহা আফরাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আনোয়ার হোসেন স্বপনকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আনোয়ার হোসেন স্বপন ওই এলাকার মৃত কবির আহম্মদের ছেলে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে স্বপন জানায়, শ্রেণিকক্ষ থেকে আফরা পানি খেতে বের হলে স্বপন তাকে দেখে মুখ চেপে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। চিৎকার করতে চাইলে তাকে টয়লেটের দেয়ালের সাথে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এ সময় তাকে পাশবিক নির্যাতন করে। স্বপন তার গলা চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে।
২০২৩ সালের ২৫ জুন দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে সাড়ে ৯ বছরের মেয়েকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে বাবা টিপুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত শিশুটির নাম জান্নাতুল আরাফা। নিহতের মা রুমানা আক্তারের দায়েরকৃত মামলায় টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। টিপু দাগনভূঞা রাজাপুর ইউনিয়নের জয়নারায়নপুর পদুয়া বাড়ির সন্তান। তিনি এলাকায় টমটম চালান।