শেখ হাসিনার সরকারের পতনের একদিন আগে ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা গণহত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুমোদিত জমা দেওয়া অস্ত্রের ব্যালাস্টিক পরীক্ষা নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার বাদীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেনীর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শামসাদ বেগম এই নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মহিপালে গণহত্যায় এ পর্যন্ত পৃথক ৮টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নিহত ছাইদুল ইসলামের পিতা রফিকুল ইসলাম, নিহত শিহাবের মাতা মাহফুজা আক্তার, নিহত শাকিবের মাতা কোহিনুর আক্তার এবং নিহত জাফর আহম্মদের স্ত্রী আছিয়া বেগম আদালতে অস্ত্রের ব্যালাস্টিক পরীক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আবেদন করেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যা মামলার পর থেকে আসামিরা তা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছে। এখনো তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এর ফলে বাদীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার আসামিদের লাইসেন্সকৃত অস্ত্রগুলো ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবহার করে মহিপালে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, মামলা করার পর থেকে এজাহারভুক্ত আসামীরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা প্রতিনিয়িত হুমকি দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য। তাই বাদীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও আসামিদের জমা দেওয়া অস্ত্রের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার আবেদন করা হয়। আদালত অস্ত্রগুলোর ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে কোন অস্ত্র থেকে কতটি গুলি ছোঁড়া হয়েছে এবং বৈধ অস্ত্র কিভাবে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে থাকা ১০০টি অস্ত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত ৯৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। জমার বাকী থাকা ৭টির মধ্যে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তার স্ত্রীর নামে ৩টি এবং সোনাগাজী পৌর মেয়র খোকনের কাছে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। ইতোপূর্বে প্রাপ্ত তথ্যমতে ৯৩টি আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলিতে ৯ জন নিহতের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ফেনী মডেল থানায় দায়ের করা পৃথক ৮ হত্যা মামলায় ২ হাজার ৯৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ফেনীর ৩ সাবেক সংসদেরও নাম রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মামলায় নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আসামি করা হয়েছে।