অতঃপর জেলেই প্রেমের পরিণয় ঘটলো ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চরদরবেশ গ্রামে প্রেমিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম জিয়া ও বিবি জোহরার। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী জেলা কারাগারে দুই পক্ষের পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী কাজী আবদুর রহিম তাদের বিয়ে পড়ান।
সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরদরবেশ গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ানের ছেলে জহিরুল ইসলাম জিয়ার সাথে প্রতিবেশী কিশোরী বিবি জোহরার ছিল গভীর প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে উভয়ের সম্মতিতে শারীরীক সম্পর্কও হয়েছিল। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে তাদের বিয়ে দেবার আলাপ উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ঘটনা মীমাংসার সুযোগে টাকা দাবি করেছিল জিয়ার বাবার কাছে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৭ মে মেয়েটির পরিবারকে প্ররোচণা দিয়ে থানায় জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলায় পুলিশ জিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে তাকে প্রেরণ করা হয় কারাগারে। শেষমেষ মামলাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। গত ১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ আদেশ দেয়, জিয়া ওই মেয়েকে বিয়ে করলে জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে ফেনী জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিবেন এবং বিয়ে সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টকে অবহিত করবেন। বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা হলে আদালত জামিনের আদেশ দেবেন।
ফেনী জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ারুল করিম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনাক্রমে আজ তাদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক আজ কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
বিয়েতে উপস্থিত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে আইনজীবী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এটি নতুন একটি অভিজ্ঞতা।
মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর বলেন, নিম্ম আদালতে জামিন না হলে আমি জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে মিস মামলা দায়ের করেছিলাম। গত ১ নভেম্বর আদালত বিয়ের শর্তে আমার মক্কেলকে জামিন দেবার অভিমত ব্যক্ত করে এ আদেশ দেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ফেনী কারাগারের জেলারের তত্ত্ববধানে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে আজকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
ছেলের বাবা আবু সুফিয়ান বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে নিয়ে আজকে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য পাঠানোর পর আশা করি দ্রুত আমার ছেলের মুক্তি মিলবে। জহির মুক্তি পেলে বাড়িতে বড় করে অনুষ্ঠান করে ছেলের বউকে ঘরে তুলে নেব।
নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর প্রেমের এমন পরিণতিতে কনে জোহরা নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এমন আয়োজনে এবং হাইকোর্টের রায়ে আমি খুশি। দ্রুত আমার স্বামীর মুক্তি দেবার অনুরোধ জানান তিনি।
জোহরার মামা আবু সুফিয়ান বলেন, হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমরা সন্তুষ্ট। রায়ের শর্তানুযায়ী জিয়া দ্রুত জামিন লাভ করবে এটিই আমাদের পরিবারের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আমরা চাই ছেলে ও মেয়ে দুজনের ভবিষ্যত জীবন সুখ ও শান্তিময় হোক।
বিয়ে পড়ানো শেষে কারাগারে উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়, নব দম্পত্তির সুখ শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ফেনীতে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলছেন আইনজীবীরা।