মাদক মামলায় সাজা হলেও কারাগারে যেতে হচ্ছে না অভিযুক্ত আসামিকে। কারাবাসের বদলে তাকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর দুটি সিনেমা দেখতে হবে। গাছ লাগাতে হবে। খাওয়াতে হবে এতিমদের। নিয়মিত পড়তে হবে নামাজ। মাদক থেকেও দূরে থাকতে হবে।
ফেনীর আদালতে এই প্রথম অপরাধের ধরণ বিবেচনায় ঘোষিত দণ্ড স্থগিত করে আসামিকে ১ বছরের জন্য সংশোধনের উদ্দেশ্যে ৮টি শর্তে জামিন প্রদান করা হয়েছে। আসামিকে সংশোধনের সুযোগ দিতেই গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ রায় দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোঃ জাকির হোসাইন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের উত্তর তারাকুচা গ্রামের মৃত এরশাদ পাটোয়ারীর ছেলে এনায়েত পাটোয়ারী (৫৩) কে ১৫শ গ্রাম গাঁজাসহ ফেনী মডেল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আসামি এনায়েত পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ এর ১৯ (১) এর টেবিল ৭ (ক) ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামলার যুক্তিতর্ক শেষে আসামিকে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দণ্ডিত করে আদেশ প্রদান করেন।
একই আদালত আসামির বর্তমান বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে ঘোষিত দণ্ড ১ বছরের জন্য স্থগিত করে আসামি এনায়েত পাটোয়ারীকে দ্যা প্রবেশন অব অফেন্ডার অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ (The Probation of Offenders Ordinance, 1960) অনুযায়ী এক বছরের জন্য ৮ শর্তে প্রবেশনার কর্মকর্তা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফেনী’র অধীনে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রবেশন প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আদেশ প্রদান করেন।
আদালতের নির্দেশিত প্রবেশনের শর্তাবলী হচ্ছে-
১. আসামি কখনো মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রয় করবেনা।
২. আসামি মাদক বিরোধী জনমত ও আন্দোলন এবং জনসচেতনতায় ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করবে ও ভূমিকা রাখবে।
৩. আসামির জীবিত মাতাকে দেখাশোনা ও পর্যাপ্ত ভরন-পোষণ প্রদান করবে।
৪. আসামি প্রবেশনকালীন সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর দুটি সিনেমা দেখতে হবে এবং দেশপ্রেমের বিষয় মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
৫. আসামি তার নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৩টি ফলজ গাছ ও তার গ্রামের মাঝে ৩০টি বনজ গাছ রোপণ করে প্রবেশন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
৬. আসামিকে ফেনী সদর উপজেলার যে কোন একটি এতিমখানায় ২০জন এতিমকে এক দিনের খাবার সরবরাহ করে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে হবে।
৭. আসামিকে সংশোধিত হওয়ার নিমিত্তে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং
৮. উপরোক্ত বিষয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে প্রতিমাসে একবার দেখা করে শর্ত সমূহের অগ্রগতি জানাতে হবে।
এছাড়া প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে তার নির্দেশিত মতে আসামি নিজেকে পরিচালিত করার চেষ্টা করতে হবে।
ফেনীর আদালতে এটিই প্রথম ঐতিহাসিক প্রবেশন আদেশ। এর আগে ফেনীতে এ ধরনের কোন আদেশ প্রদান করার নজির নেই বলছেন আইনজীবীরা। এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীসহ উপস্থিত আইনজীবীরা এ আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী শাহনুর আলম শাহীন জানান, আসামীর বয়স ৫৩ বছর। তার পিসিআর এ কিছু নেই। আসামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জামিন নেয়ার পরও বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন। বিজ্ঞ আদালত আসামীর অপরাধের ধরন ও বয়স বিবেচনায় দন্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে প্রবেশনের সুযোগ দিয়েছেন।